আশ্বাস: পাশে থাকার। নিজস্ব চিত্র
অন্যের সাহায্যের উপরেই নির্ভরশীল তাঁরা। তাঁদের নিয়ে যে নিরন্তর ঠাট্টা-তামাশা চলে, তা জানেন তাঁরাও। তাঁদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই ওঠে জোরজুলুমের অভিযোগ। কিন্তু সঙ্কটে তাঁরাও যে বন্ধু হতে পারেন, বাড়িয়ে দিতে পারেন সাহায্যের হাত— তা দেখাচ্ছেন স্বরূপনগরের জনাকয়েক বৃহন্নলা। নিজেদের জমানো টাকায় কেনা চাল-ডাল-আলু নিয়ে নিরন্ন মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। তুলে দিচ্ছেন সুরক্ষা সরঞ্জামও। তাঁদের এই পাশে থাকা মন ছুঁয়ে গিয়েছে অনেককেই। এর আগে বন্যার সময়েও ত্রাণের ডালি নিয়ে এই বৃহন্নলারাই হাজির হয়েছিলেন এলাকায় এলাকায়।
বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ব্লকের তরণীপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ার ঘরে বাস করেন কয়েকজন বৃহন্নলা। দুঃসময়ে এলাকার অনেকের এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। ৩২০টি অসহায় দরিদ্র পরিবারের প্রত্যেকের হাতে তাঁরা তুলে দিয়েছেন পাঁচ কেজি করে চাল, দু’কেজি করে আলু এবং একটি করে মাস্ক ও সাবান। ওই দলের সব থেকে বয়স্ক সদস্য সখী বলেন, “ওঁদের সাহায্যেই তো এত দিন আমরা বেঁচে আছি। আজ তাঁদের পাশে থাকতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।”
শুধু সাহায্য করাই নয়, স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতার বার্তাও প্রচার করছেন তাঁরা। বৃহন্নলাদের দলের সদস্য সাথী, তৃষা, তমালিকা, তুসো, ভাদু, সোনালি, সানুরা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে রীতিমত উৎফুল্ল। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে কোপ পড়েছে তাঁদের নিজেদর রোজগারেই। তবু নিজেরা দাঁড়িয়েছেন অন্যদদের পাশে। ভাদু, সোনালি, সানুদের কথায়, “আমরা কিছু মানুষের কাছে শুধুই হাসির পাত্র। কিন্তু এই দুর্দিনে ওঁদের কষ্ট দেখে মনে হয়েছিল, মানুষ হলে এখনই ওঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তাই জমানো সামান্য টাকা নিয়েই মাঠে নেমে পড়ি।” তাঁদের আশঙ্কা ছিল, হয়তো সাড়া পাবেন না। তাঁদের হাত থেকে সাহায্য নেবেন না কেউ। যদিও এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। বরং তাঁরা বলেন, “সকলে আমাদের সন্মান করে হাত থেকে সাহায্য নিচ্ছেন দেখে বড় ভাল লাগছে।”
সাহায্য পেয়ে খুশি চন্দন মণ্ডল, ফতেমা বিবিরা বলেন, “বৃহন্নলারা সাহায্য করবেন শুনে প্রথমটা মনে হয়েছিল বুঝি ঠাট্টা করা হচ্ছে। ওঁরা যখন সত্যি সত্যিই চাল-ডাল নিয়ে এলেন, তখন সেই ভুল ভাঙে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)