প্রতীকী ছবি
গত কয়েক দিনে সংখ্যাটা ২০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ব্যারাকপুর মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তার পরেও জনতার একাংশের বাইরে বেরোনো ঠেকানো যাচ্ছে না। দক্ষিণ দমদম, বেলঘরিয়া, বরাহনগর এবং ব্যারাকপুরে গত কয়েক দিনে রোজই একাধিক করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। এই অবস্থায় এলাকা ধরে র্যা পিড টেস্টের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল নিয়ে চিন্তায় স্বাস্থ্যকর্তারাও। কারণ ওই আক্রান্তেরা কত জনকে সংক্রমিত করেছেন, সে বিষয়ে তাঁরাও অন্ধকারে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরতলির সিংহভাগ আক্রান্তের ক্ষেত্রে কলকাতা-যোগ রয়েছে। এই অবস্থায় লকডাউন আরও কঠোর ভাবে কার্যকর করার সুপারিশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
যে সব এলাকায় আক্রান্তের খোঁজ মিলছে, সেখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কে বিশেষ বাইরে বেরোচ্ছেন না। তবে অন্য এলাকায় সকালের বাজারে ভিড়ে লাগাম টানা যাচ্ছে না। পুলিশ ধরপাকড় করলেও বিশেষ লাভ হয়নি। গত কয়েক দিনে কমিশনারেট এলাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৪০০ জনকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কার্যত পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন তাঁদেরই একটি অংশ। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তার পরেও যদি লোকজন নিজেরা সচেতন না হন, পুলিশ তা হলে নিরুপায়।’’
গত কয়েক দিনে বেলঘরিয়া এবং বরাহনগরে আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক এবং নার্সও। ব্যারাকপুরের এক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। সকলেরই কলকাতা-যোগ রয়েছে। দক্ষিণ দমদম এবং উত্তর ব্যারাকপুরে রবিবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন। তার জেরে সংশ্লিষ্ট এলাকা সিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, দক্ষিণ দমদম থেকে উত্তর ব্যারাকপুর পর্যন্ত মোট ২৮টি ওয়ার্ডের ৩২টি এলাকা পুরোপুরি সিল করা হয়েছে। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি এলাকা দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম এবং কামারহাটি পুরসভার অধীনে।
ব্যারাকপুর মহকুমার পুরসভাগুলির অবস্থাও দিশাহারা। একে তো রোজ নতুন নতুন এলাকা সিল করতে হচ্ছে। ওই এলাকার পরিবারগুলির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে পুর প্রশাসনকেই। এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজও করতে হচ্ছে নিয়মিত। অন্য দিকে, পুরসভা চালাতে হচ্ছে অর্ধেক কর্মী দিয়ে। পুর প্রধানদের বক্তব্য, আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে পুরকর্মীরাও গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় যেতে চাইছেন না। ব্যারাকপুরের পাশাপাশি শহরতলির অন্য এলাকাতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইছাপুর এবং নৈহাটি মিলিয়ে গত কয়েক দিনে পাঁচ আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। বিভিন্ন এলাকায় দাবি উঠেছে, এক পুর এলাকা থেকে অন্য পুর এলাকায় যাতায়াত কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নিয়ে চিন্তায় রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। আক্রান্তের পরিবারের সদস্য কিংবা সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের সংস্পর্শে কত জন এসেছিলেন, সেই হিসেব নেই। ফলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী এক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এই অবস্থায় চিকিৎসকেরা সকলকেই বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নেহাত প্রয়োজন ছাড়া শুধু বাজার করার জন্য রোজ বেরোতে বারণ করছেন তাঁরা। গত শুক্রবার থেকে পুলিশ আরও কড়াকড়ি শুরু করেছে। সব ক্ষেত্রে পাস দেখালেও গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলছে না ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায়।