প্রতীকী ছবি
২১ জুলাই সংখ্যাটা ছিল ৪৫৬। ঠিক পরের দিনই সেটা দাঁড়াল ৬২৪। শুধুমাত্র ২২ জুলাই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৬২৪ জন করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন। এত দিন সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি ২০-২২ এর মধ্যেই ছিল। এক দিনে তা দাঁড়াল ১৬৮। দীর্ঘদিন ধরেই জেলায় সংক্রিমেতের হার ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এক দিনে এর আগে এত জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই কপালের ভাঁজ বেড়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের।
তবে ২২ জুলাই এর পর থেকে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। ২৭ জুলাই সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৯৩। একই সঙ্গে জেলায় সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। তাতে কিছুটা আশা দেখছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞদের একটা মহল মনে করছে, সারা জেলায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন হচ্ছে বেশ কিছু এলাকায়। সংক্রমণের এই নিম্নগতি সেই কারণেও হতে পারে। কোনও কোনও এলাকার আক্রান্তের সংখ্যা বিচার করে এমন মত দিচ্ছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য বলছেন, এখনই জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয় যে, লকডাউনের জন্যই সংক্রমিতের সংখ্যা কমেছে। তবে সংখ্যা হ্রাস খুবই আশার কথা। আর যেহেতু এই সময়ে লকডাউন হয়েছে, সংক্রমণের নিম্নগতির সেটা অন্যতম কারণ বলে আপাতত ধরে নেওয়া হচ্ছে।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কিছু এলাকা, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, দমদম পুরসভা এলাকায় গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা হচ্ছে। লকডাউনের আগের সপ্তাহের সঙ্গে বর্তমান সপ্তাহের আক্রান্তের সংখ্যার তারতম্য চোখে পড়ার মতো। এই এলাকাগুলিতে লকডাউনের পরের সপ্তাহের হিসেব বলছে, কমেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। এর পাশাপাশি অন্য হিসেবও রয়েছে। বনগাঁ মহকুমার বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন হলেও সংক্রমণের সংখ্যা সেখানে ঊর্ধ্বমুখী।
তবে মহকুমার সামগ্রিক সংক্রমিতের সংখ্যা না দেখে লকডাউন এলাকার আক্রান্তের হার বিচার করলেও এই হিসেব আরও পরিষ্কার হবে। বসিরহাট মহকুমায় লকডাউন কিছুটা আশা জাগিয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সেখানে সপ্তাহভর কড়া লকডাউনের পরে সোমবারের ফল কিছুটা আশাব্যঞ্জক। আগে গড়ে রোজ ৭০-৮০ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছিল। সোমবারে তা ৪১ জনে নেমে এসেছে। আরও কিছুদিন যদি সংখ্যাবৃদ্ধি না ঘটে, তা হলে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে যে, লকডাউনের কারণেই এই সংখ্যা হ্রাস। কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। তার পরেও বাজারে বাজারে প্রভাতী জমায়েতে কোনওভাবেই রাশ টানা যাচ্ছিল না। এর পরেই পুরসভাগুলি পুলিশ-প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে স্থানীয়ভাবে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরের সপ্তাহে এলাকা ধরে ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি জায়গায় সংক্রমিতের সংখ্যা কমেছে। তার প্রভাব পড়েছে জেলার সার্বিক সংক্রমণের সংখ্যাতেও।
২২ জুলাই ৬২৪ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরের দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৪৫। তার পর থেকে পরপর চার দিন সংক্রমিতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। দীর্ঘদিন পরে সোমবার ফের সেই সংখ্যা ৫০০-র নীচে নেমেছে। এই সময়ে কিছু কিছু নতুন এলাকায় সংক্রমণের হার অনেকটাই বেড়েছে। তা না হলে সার্বিক আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম হত। গত তিন দিনে আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হওয়ার হার বেড়েছে। চিকিৎসকেদের কাছে এটাও স্বস্তির।
তবে চিন্তায় রেখেছে মৃতের সংখ্যা। ২১ জুলাই মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। মাঝে এক দিন ছাড়া পরের কয়েকদিনে সেই সংখ্যা ৫-৬ জনের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সোমবার মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। চিকিৎসকদের আশা আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করলে, মৃতের সংখ্যাও কমবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)