কাজ করছেন শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র
অভাবের জেরে পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে। সেখানে গিয়ে কাজ পান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই কাজ ছেড়ে ফিরে আসতে হয় গ্রামে। এখন নিয়ম শিথিল হওয়ায় ফের ভিন রাজ্যে চলে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন একদল শ্রমিক। তবে তা জানতে পেরে তাঁদের আটকান পঞ্চায়েত প্রধান। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাঁধ মেরামতের কাজ দিয়ে শ্রমিকদের গ্রামে থেকেই রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
মিনাখাঁর আটপুকুর পঞ্চায়েতের ঘটনা। আমপানের দাপটে বিদ্যাধরী নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল মিনাখাঁর আটপুকুর অঞ্চলের উচিলদহ গ্রাম। আশপাশের ভাঙাপাড়া, গড়কোহাটি, বিহারী এলাকাতেও জল ঢুকে পড়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েন গ্রামের মানুষ। সে সময় দ্রুত কোনও রকমে নদী বাঁধ মেরামতের কাজ করেছিল প্রশাসন। নড়বড়ে বাঁধের জন্য ফের আর এক দফা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
নদী বাঁধ নিয়ে গ্রামের মানুষ যখন উদ্বিগ্ন, তখনই বেশ কিছু শ্রমিক কাজের খোঁজে ফের কেরল, তামিলনাড়ু, গুজরাতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তা জানতে পেরে আটপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান মানস মাহাতো এগিয়ে আসেন। সকলকে নিয়ে আলোচনায় ঠিক হয় একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে। তাতে একদিকে যেমন গ্রামের মানুষের ভিন রাজ্যে যাওয়া আটকানো যাবে, তেমনই নদীবাঁধ শক্তপোক্ত হলে আর ভাঙার আশঙ্কা থাকবে না।
পরিকল্পনা মতো দিন কয়েক হল গ্রামের মানুষদের নিয়ে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে এই নদীবাঁধ নতুন করে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধ প্রায় দশ ফুট চওড়া করা হবে বলে পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। পঞ্চায়েতের পরিকল্পনায় খুশি এলাকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা কানুপদ বাছাড়, স্বপন মাহাতো, রত্না দাসরা বলেন, ‘‘অভাবের জেরে পরিবারের অধিকাংশই ভিন রাজ্যে কাজ করি। করোনার ভয়ে গ্রামে পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই ঠিক করেছিলাম, যা হওয়ার হোক, ফিরে যাব ভিন রাজ্যে। তবে প্রধানের চেষ্টায় আপাতত আমরা এলাকাতেই কাজ পেয়েছি।” প্রধান মানস বলেন, “ওঁরা এসে দুঃখ দুর্দশার কথা বলেন। তারপরেই নদী বাঁধে মাটি ফেলার কাজের ব্যবস্থা করা হয়। এতে এলাকায় কাজ করেই গ্রামের মানুষ রোজগারের মুখ দেখছেন।” একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সুপারভাইজার জয়দেব দাস বলেন, “আটপুকুর পঞ্চায়েতের পরিকল্পনায় শ্রমিকরা যেমন কাজ পেয়ে খুশি, তেমনি নদীর পাড় চওড়া এবং শক্তপোক্ত হচ্ছে দেখে খুশি এলাকার মানুষও।’’