আশা-আশঙ্কার দুর্গাপুজো শেষ হল। ভিড় ঠেকাতে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক নির্দেশও দেখল বাঙালি। কিন্তু করোনা নিয়ে আশঙ্কা কি কাটল আদৌ? করোনা যেমন বিদায় নেয়নি, তেমনই পুরো নভেম্বর জুড়ে রয়েছে আরও নানা পালা-পার্বণ। সব থেকে বড় চিন্তা দীপাবলি নিয়ে। কারণ, দীপাবলির বাজির বিষবাষ্প করোনা আক্রান্তদের জন্য দুঃসংবাদই বয়ে আনবে।
আদালতের নির্দেশে শহরের পুজো মণ্ডপগুলিতে জনজোয়ারের ছবি দেখা না গেলেও, রাস্তায় কিংবা হোটেল-রেস্তরাঁয় ভিড়ের ছবি হাজারো আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। তাই আগামী কয়েক দিনে সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। এতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এ বছর প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে উৎসব স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও চ্যালেঞ্জ। এ বছর চ্যালেঞ্জ জমায়েত ঠেকানো। তার সঙ্গে দীপাবলিতে বাজির বিষও ঠেকানো জরুরি। এই দূষিত বায়ু করোনা-আক্রান্তদের সমস্যা আরও জটিল করে তুলবে। যাঁরা করোনো থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই দূষণ সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।
প্রতি বছর কালীপুজো বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ে যে সমস্যা থাকে, তাতেই অনেকের সমস্যা হয়। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কোভিড। কোভিডে মূলত ফুসফুসের সমস্যা হচ্ছে। যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলছে কোভিড নিউমোনিয়া। যেখান থেকে আরও বাড়াবাড়ি হয়ে এআরডিএস-ইত্যাদিতে পরিণত হচ্ছে। যাঁরা এই নিউমোনিয়া থেকে সেরে উঠছেন, তাঁদেরও অনেকের ফাইব্রোসিস হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, ফুসফুসের কিছু অংশ অক্সিজেন আদান-প্রদানে আর কাজে লাগছে না। কালীপুজোর সময়ে প্রতিবার বায়ুদূষণের মাত্রা যে হারে বেড়ে যায়, তাতে শ্বাসনালির প্রদাহ, হাঁপানি, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ়)— এই ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে সমস্যা এমনিতেই বাড়ে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও হিমেল হাওয়ার জলকণা মিলে তৈরি হয় মিস্ট, যা শ্বাসনালিতে ঢুকে তৈরি করতে পারে প্রদাহ বা ব্রঙ্কাইটিস। এই সব কো-মর্বিডিটির সঙ্গে এ বার থাকছে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা। বহু দিন ধরে শ্বাস-অঙ্গের সমস্যায় ভুগতে থাকা আমার-আপনার বাড়ির বয়স্ক মানুষগুলোর যদি কোভিড সংক্রমণ ঘটে, সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট মানুষটির খুব খারাপ অবস্থা হতে পারে। সেই সঙ্গে হাসপাতালে দিন দিন অপ্রতুল হতে থাকা বেড। সুতরাং, সামনের দিনগুলি উৎসবের হলেও আনন্দ-উদ্দীপনার রাশটা যেন হাতের বাইরে না বেরিয়ে যায়, সেই খেয়াল কিন্তু আপনাদেরই রাখতে হবে।