Violence

বোমা-গুলি, ফের উত্তপ্ত শিল্পাঞ্চল

তৃণমূল এবং বিজেপি নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে এলাকা অশান্ত করার অভিযোগ করেছেন।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজনৈতিক সংঘর্ষে নতুন করে তেতে উঠছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। বৃহস্পতিবার রাতে ভাটপাড়া, নৈহাটি এবং হালিশহরে তৃণমূল এবং বিজেপির গোলমাল-সংঘর্ষে তেতে ওঠে এলাকা। ভাটপাড়ায় একটি পার্টি অফিস দখলকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি হয়। নৈহাটিতে তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসে বোমা পড়ে। হালিশহরে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা মারা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

তৃণমূল এবং বিজেপি নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে এলাকা অশান্ত করার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছে দু’পক্ষই। অশান্তির দায় কোনও দল না নিলেও আতঙ্কিত এলাকার সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, করোনাকালে এমনিতেই মানুষের রুজি-রুটির আকাল। এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে না লড়ে আম নাগরিকদের পাশে দাঁড়াক। গোলমালের প্রথম ঘটনাটি ঘটে নৈহাটির গোয়াল ফটক এলাকায়। বুধবার রাতে সেখানে এক বিজেপি কর্মী তৃণমূল কর্মীদের হাতে প্রহৃত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মারপিটে তৃণমূলের কর্মীরাও জখম হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে জখম বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যান ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। কাছাকাছি একই সময়ে তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে গিয়েছিলেন হালিশহরের তৃণমূল নেতা সুবোধ অধিকারী। সে সময়ে অর্জুনকে দেখেই তৃণমূল কর্মীরা তাড়া করেন বলে অভিযোগ। অর্জুন এলাকা ছেড়ে চলে যান। সুবোধের অভিযোগ, অর্জুন জনরোষের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করছেন বিজেপি সাংসদ।

পরের ঘটনা ভাটপাড়ার। শহরের রামনগর কলোনি এলাকায় একটি পার্টি অফিসে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমি পুজো উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা। অভিযোগ, সে সময়ে ওই পার্টি অফিসের বাইরে বোমাবাজি শুরু হয়। বোমায় দুই মহিলা জখম হন। ধোঁয়ায় চারদিক ভরে যায়। পার্টি অফিস থেকে বিজেপি কর্মীরা পালিয়ে যান। অভিযোগ, তখন তৃণমূল কর্মীরা ওই পার্টি অফিস দখল করে। অফিসের বাইরের দেওয়ালে গেরুয়া রঙের উপরে সবুজ রঙ করে দেওয়া হয়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছুক্ষণ পরে বিজেপি কর্মীরা লোকজন নিয়ে ফের ওই পার্টি অফিসে এলে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। বেশ কয়েকটি বোমা পড়ে। গুলি চলে বলেও অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে হটিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। শুক্রবার সকালে বিজেপির লোকেরা ফের ওই পার্টি অফিসে গিয়ে তৃণমূলের ঝান্ডা নামিয়ে তাদের দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেন। তৃণমূল কর্মীরাও ফের গেলে উত্তেজনা বাড়ে। পুলিশ পার্টি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে বিজেপিও অফিসে তালা মারে। তারপরে তৃণমূলও এসে একটি তালা ঝুলিয়ে দেয়। আপাতত ফটকে তিনটি তালা ঝুলছে।

অর্জুনের অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূল বোমাবাজি করেছে। অন্তত ৩০ রাউন্ড গুলি চলে সেই রাতে। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ থাকল, ক্ষমতা থাকলে পুলিশ বাদ দিয়ে আমাদের কোনও পার্টি অফিস দখল করে দেখান। সাহস থাকলে পুলিশকে সঙ্গে না নিয়ে আমাদের কোনও কর্মীর গায়ে হাত দিয়ে দেখাক

ওদের গুন্ডারা।”

নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, “কোনও পার্টি অফিস পুনর্দখলের গল্প নেই। ওটা আমাদের পার্টি অফিস ছিল। গত বছর বিজপি জোর করে দখল করেছিল। আমাদের ছেলেরা ফের সেখানে গিয়ে বসেছিল। তখন অর্জুনের গুন্ডারা সেখানে বোমাবাজি করে আমাদের নামে চালানোর চেষ্টা করছে।”

ভোরে গোলমালের ঘটনা ঘটে হালিশহরে। সেখানে সুবোধের বাড়ির বাইরে পর পর চারটি বোমা পড়ে। একটি গাড়ি রাখা ছিল। বোমায় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও বাইরে বেরিয়ে কাউকে দেখা যায়নি।

সুবোধের অভিযোগ, “যেহেতু নৈহাটিতে তাড়া খেয়ে অর্জুনকে পালাতে হয়েছিল, তার শোধ তোলার জন্য রাতের অন্ধকারে গুন্ডা পাঠিয়ে আমার বাড়িতে বোমা মারিয়েছে। ক্ষমতা থাকলে দিনেরে আলোয় এসে উনি সামনে থেকে মোকাবিলা করুন।” অর্জুনের পাল্টা বক্তব্য, “সম্প্রতি ওর নিরাপত্তা কিছুটা কমানো হয়েছে। পার্টিতে নিজের দাম বাড়াতে এবং সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী পেতে নিজের লোক দিয়ে নিজের বাড়িতে বোমাবাজি করিয়েছে সুবোধ।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement