শোকার্ত: সৌরভ ও সৈকতের পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
ট্রলার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এফবি-হৈমাবতীর দশজন মৎস্যজীবীর। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নামখানার দেবনিবাস গ্রামের একই পরিবারের দুই ভাই সৌরভ ও সৈকত দাস। পরিবারে রোজগেরে সদস্য বলতে ছিলেন তাঁরাই। তাঁদের মৃত্যুতে একদিকে যেমন গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে, তেমনই এ বার সংসারটা কী ভাবে চলবে, ভেবে পাচ্ছেন না পরিবারের বাকিরা।
বাড়িতে রয়েছেন সৈকত-সৌরভের বৃদ্ধ বাবা-মা। বছর কয়েক আগে বিয়ে করেন বড় ভাই সৈকত। বছর ছ’য়েকের মেয়ে আছে। সৌরভ ছিলেন অবিবাহিত। সৈকত-সৌরভের বৃদ্ধ বাবা গোপাল জানালেন, এক সময়ে ভ্যান চালিয়ে খুব কষ্ট করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন। এখন আর ভ্যান টানার ক্ষমতা নেই। বছর দশেক ধরে দুই ছেলে চাষবাস করে, সমুদ্রে মাছ ধরে সংসারের হাল ধরেছিলেন। একটু একটু করে শ্রী ফিরছিল হতদরিদ্র পরিবারে। সম্প্রতি সরকারি প্রকল্পের সাহায্যে পাকা বাড়ির কাজ শুরু করেছিলেন দুই ভাই।
শুক্রবার নির্মীয়মাণ সেই বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন সৈকতের মা-বাবা-স্ত্রী। পাশেই দাঁড়িয়ে ছোট্ট মেয়ে শ্রদ্ধা। বাবা যে আর ফিরবে না, বুঝে গিয়েছে সে-ও।
ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ মিলেছে। তবে সেই টাকায় সারাটা জীবন কী ভাবে চলবে, জানেন না সৈকতের স্ত্রী যশোদা। তাঁর কথায় “সরকার টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিলে মেয়েটাকে ভাল ভাবে বড় করতে পারতাম।”
সৈকতের স্ত্রীর কাজের জন্য সওয়াল করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুশীল দাসও। তিনি বলেন, “পরিবারের দুই উপার্জনশীল ছেলে এক সঙ্গে মারা গেল। খুবই অসহায় অবস্থা পরিবারটির। সৈকতের স্ত্রীর একটা কাজের ব্যবস্থা হলে খুবই ভাল হয়।” নামখানার বিডিও শান্তনু ঠাকুর সিংহ বলেন, “আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাব। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীকেও বলব।”
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, “চেক বিলির সময়ে দুই ভাইয়ের বৃদ্ধ বাবার আর্তনাদ দেখেছি। আমার সহানুভুতি ওঁদের সঙ্গে রয়েছে। পরিবারের কোনও পড়ুয়া থাকলে, তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ দেওয়া হবে। মৃতের স্ত্রীর কাজের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।”