বিড়ম্বনা: রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সারি বাড়াচ্ছে যানজট। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে ধীরে ধীরে বাণিজ্যে গতি ফিরছে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে। যদিও দৈনিক ৭০০ ট্রাক পণ্য রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বনগাঁর রাস্তায় এখনও বহু ট্রাক দাঁড়িয়ে।
কিছুদিন ধরে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্যে গতি কমে গিয়েছে। অভিযোগ, বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ দৈনিক এ দেশ থেকে ১৫০-২০০টি পণ্য-বোঝাই ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢোকাচ্ছিল। এর ফলে এ দেশের পার্কিং লটগুলি ট্রাকে ভরে গিয়েছে। রাস্তায় ট্রাক দাড়িয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়ছেন বনগাঁর মানুষ।
বুধবার মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাণিজ্য-সংক্রান্ত জট ও সড়কে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যার কথা তোলেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বনগাঁর পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ।
সমস্যার কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী ডিজিকে নির্দেশ দেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে নবান্নে বৈঠক করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। তিনি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের আগেই অবশ্য মঙ্গলবার দু’দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। পেট্রাপোল সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ওই বৈঠকে দু’দেশের শুল্ক, বন্দর কর্তৃপক্ষ-সহ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক ডেকেছিল পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, এখন এখন থেকে প্রতিদিন ৬৫০-৭০০টি পণ্য-বোঝাই ট্রাক বেনাপোলে যাবে। এতদিন রোজ ২০০-২৫০টি পণ্য-বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে যাচ্ছিল।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানানো হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে বুধবার ৪১১টি, বৃহস্পতিবার ৪৬৫টি পণ্য-বোঝাই ট্রাক বেনাপোলে গিয়েছে। শুক্রবার বাণিজ্য বন্ধ থাকে। শনিবার দুপুর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত দেড়শো পণ্য-বোঝাই ট্রাক ঢুকেছে বেনাপোলে। তা ছাড়া, পণ্য আমদানি ও রফতানির সময়সীমা বেড়েছে মঙ্গলবারের পর থেকে। আগে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পণ্য-বোঝাই ট্রাক বেনাপোলে ঢুকছিল। এখন রাত ১টা পর্যন্ত পণ্য নিয়ে ভারতীয় ট্রাক বেনাপোলে ঢুকছে।
গোপাল বলেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের পরে সার্বিক ভাবে পণ্য রফতানির ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা, দৈনিক ৭০০ পণ্য-বোঝাই ট্রাক পাঠানো। তা এখনও হয়নি। এখন ৪০০-৪৫০ ট্রাক যাচ্ছে। এ ভাবে চললে পার্কিং ও সড়ক থেকে ট্রাক সরতে ২০-২৫ দিন লেগে যাবে।’’ এখন প্রায় ৮ হাজার ট্রাক রাস্তায় এবং বিভিন্ন পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘বাণিজ্যে গতি আনতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, দৈনিক ৭০০টি ট্রাক পণ্য রফতানি করা।’’ কেন দৈনিক আরও পণ্য-বোঝাই ট্রাক বেনাপোলে যাচ্ছে না? এ বিষয়ে ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমস্যাটা এখন বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের। তাদের পরিকাঠামো উন্নত হওয়া সত্বেও সেখানে গুদামগুলি পণ্যে ভর্তি থাকে। দ্রুত খালি করা হয় না বা গুদামের মালপত্র দ্রুত কারখানাগুলিতে পাঠানো হচ্ছে না। ফলে ভারতীয় ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোলে গেলেও দ্রুত পণ্য খালি করতে পারছে না।’’ ভারতীয় ট্রাকের পণ্য দ্রুত খালি করতে না পারলে বাণিজ্যে গতি আসবে না মনে করেন তিনি। বিষয়টি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কার্তিক।
আরও কিছু সমস্যাও আছে। কার্তিক জানান, পণ্য নিয়ে ভারতীয় ট্রাক বেনাপোলে ঢুকলে জিরো পয়েন্টে ট্রাকের তেল মাপা হয়। নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপরে কিছুটা এগিয়ে স্ক্যানার দিয়ে ট্রাক পরীক্ষা করা হয়। ফলে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। কার্তিক বলেন, ‘‘বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় ট্রাক ঢোকার পরে তেল মাপা, নথি পরীক্ষা, ট্রাক পরীক্ষা করা হলে সময় বাঁচবে।’’ প্রায় ৪০ দিন ধরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যা চলছে। রাস্তার উপরে সার দিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। গোপাল বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বনগাঁয় আসা পণ্য-বোঝাই ট্রাকগুলি পুরসভার পার্কিংয়ে অনলাইন এন্ট্রির পরিকল্পনা করেছি। এর ফলে ট্রাকের কারণে যানজট কমতে পারে।’’