deforestation

টাকি রোড সম্প্রসারণেও কাটা পড়েছে হাজারখানেক গাছ, একটি গাছও কি পোঁতা হয়েছিল, উত্তর অমিল

বন দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রসারণের জন্য বারাসত থেকে দেগঙ্গা পর্যন্ত টাকি রোডের কুড়ি কিলোমিটার অংশে ১৫১৪টি গাছা কাটা হয়েছিল।

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী

বারাসত শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৬
Share:

রাস্তার কোনও পাশেই গাছের দেখা নেই। টাকি রোডে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

কাটা হয়েছে ১৫১৪টি গাছ।

Advertisement

সরকারি নিয়ম মানলে, কাটার আগেই লাগানোর কথা ছিল ৭৫৭০টি গাছ।

বাস্তবে একটিও গাছ লাগানো হয়েছে কি না গত পাঁচ বছরে, তার কোনও তথ্যই নেই প্রশাসনের হাতে।

Advertisement

বারাসত থেকে হাসনাবাদ, ভায়া বসিরহাট পর্যন্ত টাকি রোড সম্প্রসারণের কাজ চলছে। রাস্তার দু’পাশের গাছ কাটা হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু গাছ কোথায় কত লাগানো হয়েছে, আদৌ হয়েছে কি না— তা নিয়ে সেই একই ধোঁয়াশা!

বন দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রসারণের জন্য বারাসত থেকে দেগঙ্গা পর্যন্ত টাকি রোডের কুড়ি কিলোমিটার অংশে ১৫১৪টি গাছা কাটা হয়েছিল। যার মধ্যে মেহগনি ছাড়াও ছিল প্রাচীন আম, বট, অশ্বত্থ, নিম, শিরীষ, হিমঝুরির মতো গাছ। ২০১৯ সালের আগে একাধিক ঠিকাদার সংস্থা এই গাছ কেটেছে। সে সময়ে জেলা প্রশাসনের তরফে সংস্থাগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোথায় তারা বিকল্প বৃক্ষরোপণ করবে। সূত্রের খবর, সেই উত্তর আজও প্রশাসনের হাতে এসে পৌঁছয়নি।

পরিবেশপ্রেমীদের প্রশ্ন, কেন ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে নিয়ম মানতে বাধ্য করেনি প্রশাসন। ‘পশ্চিমবঙ্গ বৃক্ষ আইন ২০০৬’-এর ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও প্রকল্পের প্রয়োজনে গাছ কাটার আগেই পরিপূরক বৃক্ষরোপণের প্রস্তাব জানানোর কথা। তবেই প্রকল্পের ছাড়পত্র মেলে।

এপিডিআর-এর বারাসত শাখার সম্পাদক বাপ্পা ভুঁইঞা বলেন, ‘‘চারা গাছ পুঁতে বড় গাছ কাটার ক্ষতিপূরণ হয় না। প্রয়াত বিজ্ঞানী তারকমোহন দাস দেখিয়েছিলেন, পঞ্চাশ বছরে একটি গাছ মানুষকে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের অক্সিজেন৷ এক জন মানুষের দিনে প্রয়োজন সাড়ে ৩ কেজি বিশুদ্ধ অক্সিজেন৷ আর পরিবেশ দিনে সাড়ে ১২ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড ফিরিয়ে দেন এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষ৷ তা গ্রহণ করে গাছই৷ একটি শিরীষ গাছ বছরে সাড়ে ২৮ টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে৷’’ বাপ্পার ক্ষোভ, সরকার এ সব জানে না, এমন নয়। অথচ, নিজেরাই আইন প্রয়োগ করে না!

নিয়ম না মানলে শাস্তির বিধান কী?

যদি কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, সংস্থা বা সরকারি সংস্থাও ‘পশ্চিমবঙ্গ বৃক্ষ আইন, ২০০৬-এর ৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে গাছ কাটে, তা হলে ওই একই আইনের ১১ নম্বর ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০০০ টাকা জরিমানা অথবা দু’টিই হতে পারে।

যদি কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা বৃক্ষ আইনের ৯ নম্বর ধারা অনুসারে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা না করেন, তবে তিনি বা ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির দু’বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা দু’টিই হতে পারে।

কিন্তু এই আইনে কবে কার শাস্তি হয়েছে, মনে করতে পারছেন না জেলা প্রশাসনের কর্তারা। পরিবেশপ্রেমী বিধান অর্কপ্রভ রায় বলেন, ‘‘সরকার সড়ক নির্মাণে গাছ কাটতে উৎসাহী বেশি। অথচ, বনসৃজনের জন্য কঠোর হতে ঠিক ততটাই উদাসীন। নেপথ্যে কোনও দুর্নীতি আছে কি না, সেটা আদালতের পর্যবেক্ষণে তদন্ত হওয়া উচিত।’’

টাকি রোডে গাছ বাঁচিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন গাছ বাঁচাও আন্দোলনকারীরা। সরকারের তরফে যুক্তি ছিল, এ ক্ষেত্রে জমি পেতে সমস্যা আছে। এ সব ক্ষেত্রে সরকারের নীতি, কোনও কারণে জোর করে জমি নেওয়া যাবে না। পরিবেশপ্রেমী তারক মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘সরকার তো মানবসম্পদ রক্ষার বদলে মানুষের বেঁচে থাকাকেই বিপদে ফেলে দিচ্ছে। তা হলে কি মানুষের প্রাণ বাঁচানোর থেকেও জমি অধিগ্রহণ না করার নীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?’’

পরিবেশপ্রেমীদের এ সব প্রশ্নের সদুত্তর দেন না কেউই। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে, এটাই নিয়ম। এই নিয়ম ভাঙলে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। টাকি রোডের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। নিয়ম ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ছাড় পাবে না। আমাদের কাছে মানুষ ও প্রকৃতিই আগে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement