মানুষ রাস্তায় না বেরনোয় ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ মহকুমায় বৃহস্পতিবারের ধর্মঘট অনেকটাই প্রভাব ফেলল। অন্য দিনের তুলনায় বাস ছিল অনেক কম, গাড়িও রাস্তাতে কম দেখা গিয়েছে।
ধর্মঘটের বিরোধিতায় শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগের তালিকা খুব দীর্ঘ নয়। ধর্মঘট ব্যর্থ করার জন্য এ দিন ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের মোটরবাইক মিছিলও বেরিয়েছিল। ভোরবেলা ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে অবরোধ হয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃণমূলের চাপে তা উঠে যায় বলে বিরোধীদের দাবি। আর এ দিন সকালে মন্দিরবাজারের রত্নেশ্বরপুর মোড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে সিপিএম মিছিল করার সময় তৃণমূলের বাহিনী হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএমের দাবি, মারধর করা হয় তাদের জনা চারেককে। তবে পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। এর বাইরে কোনও বড় হিংসা বা সংঘর্ষের খবর মেলেনি।
মথুরাপুর ২ আর ডায়মন্ড হারবার ১ নম্বর ব্লক বাদ দিলে দুই মহকুমার মোট ১৩টি ব্লকের বেশির ভাগেই প্রায় সব সরকারি কর্মী হাজির ছিলেন বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, কেউ কেউ বুধবার রাতে অফিসেই থেকে গিয়েছিলেন। আদালতগুলিতেও ছিল প্রায় ১০০ শতাংশ উপস্থিতি।
কিন্তু প্রশাসনিক ভবন, অন্য সরকারি অফিস বা আদালত চত্বরে অন্য দিনের মতো ভিড় দেখা যায়নি। ডায়মন্ড হারবার ফৌজদারি আদালত চত্বরের সামনের রাস্তায় সাধারণত আদালতে আসা মানুষ আর আইনজীবীদের ভিড়ে চলা দুষ্কর। এ দিন ওই রাস্তা বিলকুল ফাঁকা। একই ছবি ধরা পড়েছে ডায়মন্ড হারবার দেওয়ানি আদালত এবং কাকদ্বীপ আদালতেও। কাকদ্বীপের এক আইনজীবী বললেন, ‘‘সবাই এসেছে, কেবল মক্কেলদেরই দেখা নেই।’’
ফলতার শিরাকোল এবং ফতেপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধের চেষ্টা হলে পুলিশ তা রুখে দেয়। কাকদ্বীপ মহকুমায় সকাল থেকে বেশ কিছু দোকান বন্ধ ছিল। বাস ও ট্রেন চলাচল অনিয়মিত ছিল। বাসে যাত্রী সংখ্যা হাতেগোনা। বিভিন্ন নদী-পথে লঞ্চ, ট্রলারও অনিয়মিত ছিল। ফলতা, ফতেপুর, জগন্নাথপুর ও শিরাকোল বাস মোড়ে বামেরা অবরোধ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। জগন্নাথপুর মোড় থেকে পাঁচ জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিনের তুলনায় কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, নামখানা, রামগঙ্গার মতো কয়েকটি দূরপাল্লার রুটে সরকারি বাস থাকলেও তা বেশ দীর্ঘ সময় অন্তর চোখে পড়েছে। ডিলাক্স অটো বা অন্য ছোট মতো গাড়িগুলিও কম চলেছে। বাস মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, দূরপাল্লার রুটে সকালের দিকে বাস চলেছে। কিন্তু বেলার পরে বাসের সংখ্যা কমে আসে। আবার ফলতা-বিজয়গঞ্জ, রাধানগর-বুরুলের মতো কয়েকটি রুটে বাস চালানোর ঝুঁকি নেননি মালিকেরা।
তবে শুধু বাসমালিকেরা নন, ধর্মঘটের দিনে ঝুঁকি নিতে চাননি অন্যেরাও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা থাকায় জেলার বিভিন্ন কলেজে সিট পড়া ছাত্রছাত্রীরা সকাল-সকাল পৌঁছে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে। দুই মহকুমার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ হয় স্কুলে, না হলে কাছাকাছি কোনও সহকর্মীর বাড়িতে আগের রাতে রয়ে গিয়েছিলেন। স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল নগণ্য। মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একেবারে ফাঁকা। উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাত্রীদের পরীক্ষা এগিয়ে এসেছে, তাই ক্লাস আর বিশেষ নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মীরা সবাই এসেছেন।’’
ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়ে ক্যানিং মহকুমাতেও। বিরোধীদের ডাকা ধর্মঘট প্রতিহত করতে সকাল থেকে রাস্তায় নামেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি, পুলিশ-প্রশাসনকেও দেখা যায়। এই মহকুমার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশকর্মীদের একাংশকেও বসে থাকতে দেখা য়ায়। কোনও কোনও জায়গায় দোকানের সামনে গিয়ে পুলিশকে বলতেও শোনা যায়, ‘‘আপনারা দোকান খোলা রাখতে পারেন। কোনও ভয় নেই।’’ যদিও এ দিন বিরোধী দলের নেতাদের রাস্তায় দেখা যায়নি। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, জীবনতলা, ভাঙড়, ঘটকপুকুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু দোকান বন্ধ ছিল। সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। কিন্তু রাস্তায় লোকজন অন্য দিনের তুলনায় হাতেগোনা।