উৎসবের মেজাজে শুরু রাতের বাণিজ্য

দু’দেশের সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ১ অগস্ট থেকে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরের মধ্যে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্যের কাজ চলবে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:১০
Share:

শুভ-যাত্রা: পেট্রাপোলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথে বাণিজ্যে গতি আনতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্যের কাজ। পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার রাহুল মাহাতো বলেন, ‘‘প্রথম দিনের কাজ স্বাভাবিক ভাবে হয়েছে। উল্লেখ যোগ্য ভাবে বাণিজ্যে বেড়েছে। এত দিন রোজ সাড়ে তিনশোর মতো পণ্য ভর্তি ট্রাক এ দেশ থেকে বেনাপোলে যেত। মঙ্গলবার সংখ্যাটি ৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

দু’দেশের সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ১ অগস্ট থেকে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরের মধ্যে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্যের কাজ চলবে। সরকারি ওই সিদ্ধান্তে পণ্য আমদানি রফতানি কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলে খুশি হলেও বাস্তবে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্যের কাজ বিশেষ করে রাতে কেমন ভাবে কাজ চলবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। যদিও প্রথম দিনে সাফল্যের সঙ্গে ওই কাজ হওয়ায় এখন স্বস্তি নেমেছে।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘‘এই সাফল্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। দু’দেশের সরকার পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দরকে যে এতটা গুরুত্ব দিয়েছে, তার মর্যাদা রাখতে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।’’

Advertisement

কেমন ছিল প্রথম দিনের কাজ?

মঙ্গলবার রাত ১২টা। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল বন্দরে গিয়ে দেখা গেল, সেন্ট্রাল ওয়ার হাউজ কর্পোরেশনের ট্রাক টার্মিনাস থেকে একের পর এক পণ্য-ভর্তি ট্রাক বেরিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বেনাপোল বন্দরে ঢুকছে। ওই রাতেও খোলা রয়েছে শুল্ক দফতর, ট্রাক টার্মিনাসের অফিস, ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির অফিস। সেখানে আধিকারিকেরা কাজে ব্যস্ত। বেশির ভাগ দোকানপাট অবশ্য বন্ধ ছিল। তবে চায়ের দোকান খোলা। শুল্ক দফতরের অপরাধদমন শাখার অফিসেও কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ল। আধিকারিকেরা এসে পরিস্থিতি দেখে যাচ্ছেন। বিএসএফ জওয়ানেরা নিরাপত্তায় রয়েছেন। ক্লিয়ারিং এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা রাতে হাজির বন্দরে।

কথা হচ্ছিল ক্লিয়ারিং এজেন্ট সমীর ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ৩৬ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। এমন পরিবেশ আগে দেখিনি। রাতে বাণিজ্যের কাজ করতে বেশ লাগছে। একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ মনে হচ্ছে।’’ সন্তু বিশ্বাস নামে অন্য এক ক্লিয়ারিং এজেন্টের এ দিন কাজ ছিল না। তবুও রাতে বাণিজ্যের কাজ দেখতে বন্দরে হাজির হয়েছিলেন।

রাতেও দেখা গেল, বেনাপোল থেকে পণ্য নামিয়ে খালি ট্রাক এ দেশে ফিরে আসছে। এত দিন সন্ধের পরে খালি ট্রাক ও দেশ থেকে আর এ দেশে ফিরতে পারত না। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ খুব সহযোগিতা করছে। এ দেশ থেকে পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাকের মালপত্র দিনের দিন খালি করা হচ্ছে। এত দিন পণ্য নিয়ে ট্রাক খালি হতে কয়েক দিন সময় লেগে যেত। এ দেশের ট্রাক চালকেরা রাতে বেনাপোল বন্দরে থাকতে ভয় পেতেন। ওখানে ট্রাক রেখে চালকেরা এ দেশে এসে রাত কাটাতেন। এ দিন অবশ্য নির্ভয়ে রাতেও এ দেশের ট্রাক চালকেরা ট্রাক নিয়ে বেনাপোলে ঢুকেছেন। এমনই এক ট্রাক চালক রাজু দত্ত বেনাপোলে ঢোকার আগে বলছিলেন, ‘‘ভয়ের কোনও কারণ দেখছি না। রাতে ট্রাক নিয়ে যেতে ভালও লাগছে।’’

বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ এ দেশের ট্রাক চালক ও খালাসিদের নিরাপত্তা দিতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি নিজের ফোন নম্বর সকলকে দিয়েছেন, কোনও অসুবিধা হল যাতে তাঁরা যেন দ্রুত যোগাযোগ করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement