Sundarbans

সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় আপাতত পর্যটন বন্ধ সুন্দরবনে

বন দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে করোনা সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০৪:৩৪
Share:

সুন্দরবনে স্তব্ধ জলযান। নিজস্ব চিত্র

আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটন বন্ধ হয়ে গেল সুন্দরবনে। করোনা সংক্রমণের কারণেই সুন্দরবনে পর্যটন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফ থেকে। শুধু পর্যটন নয়, বন্ধ রাখা হয়েছে যে কোনও ধরনের শ্যুটিং বা গবেষণার কাজও। সোমবার সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেন।

Advertisement

বন দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে করোনা সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। এক সময়ে সেফ জ়োনে থাকা সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকেও সংক্রমণ শুরু হয়েছে। গোসাবা ব্লকের ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন মঙ্গলবার পর্যন্ত। পাশাপাশি সুন্দরবনে যে সমস্ত পর্যটক বেড়াতে আসেন, তাঁদের বেশিরভাগই ক্যানিং হয়ে সুন্দরবনের দিকে রওনা দেন। গত কয়েক দিনে ক্যানিংয়েও সংক্রমণ বেড়েছে। ফলে পর্যটকেরা সুন্দরবনে যাওয়া-আসার পথে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা।

অন্য দিকে, সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যে সমস্ত বনকর্মীরা রয়েছেন, পর্যটকদের হাত ধরে তাঁদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এ সবের প্রেক্ষিতেই সুন্দরবনে পর্যটন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement

একই কারণে সুন্দরবনে বিভিন্ন ছবি, সিনেমা তৈরির জন্য যে শ্যুটিংয়ের কাজ চলে, সে সবও বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণার কাজে অনেকে আসেন। আপাতত বন্ধ রখা হচ্ছে তা-ও।

ফিল্ড ডিরেক্টর বলেন, “সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে যে পর্যটনকেন্দ্রগুলি রয়েছে, সেখানে সামান্য বনকর্মীদের দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। একদিকে বন্যপ্রাণ রক্ষার কাজ, অন্য দিকে পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যবস্থার দায়িত্ব তাঁদের উপরে। ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এখানে বেড়াতে আসছেন। ফলে তাঁদের মাধ্যমে বনকর্মীরা আক্রান্ত হয়ে পড়লে সমস্ত ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। তাই সকলের সুরক্ষার জন্যই করোনা সংক্রমণকে প্রতিহত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

দেশ জুড়ে লকডাউনের কারণে গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই সুন্দরবনে পর্যটন সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পরে গত ১৫ জুন থেকে সুন্দরবনে পর্যটন শুরুর অনুমতি দিয়েছিল বন দফতর। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন চালু করা যাবে বলে বন দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও লকডাউন কাটিয়ে বর্ষার শুরুতেই সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ায় ইলিশ উৎসবের পর্যটন মরসুমের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়েছিলেন সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। কিছু কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছিলেন। পর্যটন ব্যবসায়ীদের ধারণা ছিল, এ ভাবে চলতে থাকলে পুজোর মরসুমে অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারত সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রুখতে নতুন করে পর্যটন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে যথেষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

পর্যটন ব্যবসায়ী নিউটন সরকার বলেন, ‘‘ইলিশ উৎসবের হাত ধরে সবে অল্প অল্প করে পর্যটকেরা সুন্দরবন ভ্রমণে আসতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সে সময়ে আবারও বন্ধ হল পর্যটন। যা দু’একটা বুকিং ছিল, সেগুলোও বাতিল করতে হচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণ রুখতে বন দফতরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।” আর এক পর্যটন ব্যবসায়ী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য দীর্ঘ দিন পর্যটন বন্ধ ছিল। সমস্ত কর্মীদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হয়েছে। তার উপরে আমপানে লঞ্চের ক্ষতি হয়েছিল। সে সব প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে পর্যটন শুরু করেছিলাম। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য সুন্দরবনে পর্যটন বন্ধ হওয়ায় বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement