প্রতীকী ছবি।
বিজেপি-র অস্ত্রেই তাদের ঘায়েল করতে চাইছে তৃণমূল। তাই বিজেপি-র ‘চায়ে-পে-চর্চা’ পাল্টা হিসেবে তারা শুরু করেছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চা খাওয়ার কৌশল। এই পরিকল্পনায় খাতা বগলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চা খেয়ে গল্পগুজব করবেন কর্মীরা। অভাব-অভিযোগ, চাহিদার কথা শুনে টুকে রাখবেন সেই খাতায়।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বিধানসভাভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে দলের জনসংযোগ বাড়াতে এই দাওয়াই দিচ্ছেন জেলা নেতারা। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে এই জেলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে ঘাসফুল শিবির। বিধানসভা ভোটের আগে দলকে চাঙ্গা করার ব্যাপারে তাই এখন থেকেই জোর দিচ্ছেন নেতারা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা চেয়ারম্যান নির্মল ঘোষ, কো-অর্ডিনেটর পার্থ ভৌমিক ছাড়াও জেলা নেতা গোপাল শেঠ, নারায়ণ গোস্বামী, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি দেবরাজ চক্রবর্তীরা উপস্থিত থাকছেন সম্মেলনগুলিতে। ৩৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগ জায়গায় সম্মেলন ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছেন তাঁরা। বাকি কয়েকটিতে পুজোর আগেই সম্মেলন হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। বুধবার বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের কর্মী সম্মেলন হয়েছে পাল্লায়। সেখানে আবার শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখতে দেখা যায়নি কর্মীদের। ভোটের আগে কর্মীদের কী ভাবে এলাকায় কাজ করতে হবে, মূলত সেই রূপরেখা ঠিক করে দিচ্ছেন নেতারা। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘কর্মীদের বলা হয়েছে, বুথে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চা খেতে। মানুষের সঙ্গে গল্পগুজব করতে। তাঁদের অভাব-অভিযোগ, সমস্যার কথা শুনতে। একটি খাতায় সে সব কথা লিখে রাখতে হবে। পরে তা জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় মোট বুথের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, প্রতিটি বুথে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বুথ কমিটিগুলিকে চাঙ্গা করা হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে, কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠানোর দিকে।
লোকসভা ভোটে জেলার ৫টি আসনের মধ্যে (বসিরহাট, বনগাঁ, বারাসত, ব্যারাকপুর, দমদম) দু’টি আসনে জয়ী হয় বিজেপি। দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূলের শক্তঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এই জেলায় ব্যারাকপুর এবং বনগাঁ কেন্দ্রে পদ্ম ফোটায় বিস্মিত কম হননি তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। এমনকী, যে মতুয়ারা এ রাজ্যে সরকার গড়ার আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দেখিয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশও লোকসভা ভোটে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
দলের এ হেন ফলাফলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসে নেতারা দেখেছিলেন, স্থানীয় স্তরে দলীয় কোন্দল, মানুষের সঙ্গে কিছু নেতা-কর্মীর দুর্ব্যবহার, উদ্ধত আচরণ— এ সবই ক্রমশ তলায় তলায় জনবিচ্ছিন্ন করেছিল দলকে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানাচ্ছেন, ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি কর্মীদের যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সেই নড়বড়ে জনসংযোগ মেরামত করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে দল।
জ্যোতিপ্রিয় জানান, বুথ স্তরে একজন কো-অর্ডিনেটরের নেতৃত্বে ১০ জন সদস্য থাকছেন। ওই সদস্যেরা তাঁদের বুথের প্রতিটি বাড়িতে সপ্তাহে দু’দিন করে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুফল তাঁরা কতটা পাচ্ছেন, সে সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেবেন। অভাব-অভিযোগের কথা শুনবেন। সমাধান করবেন।
জেলা স্তরেও দলে সম্প্রতি কিছু অদল বদল করা হয়েছে। নতুন করে পাঁচজনকে কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে। প্রত্যেককে কয়েকটি করে বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের পরিবর্তে যুব তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছে দেবরাজ চক্রবর্তীকে। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো বসে যাওয়া নেতা-কর্মীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।