এ ভাবেই বসবাস। নিজস্ব চিত্র
পাকা বাড়িতে থাকেন তাঁরা। আমপানে তেমন ক্ষতি হয়নি বাড়ির। তবু তাঁদের নামে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের এমন ঘটনায় নাম জড়িয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের ১০১ ও ১০২ নম্বর বুথের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বীণা রায়ের।
তাঁর স্বামী প্রশান্তর নামে ঘরের ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে। ঘরের ক্ষতি বলতে তাঁর নতুন পাকা বাড়ির দেওয়ালে অ্যাসবেস্টসের চালের একটা জায়গায় সামান্য অংশ ভেঙে গিয়েছে। এ ছাড়া, বাড়ির ক্ষতির আর কোনও নিদর্শন দেখা গেল না। উল্টে দেখা গেল, বাড়ি তৈরির কাজ চলছে।
বীণার দুই ভাইয়ের নামেও ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে। দুই ভাই পাকা বাড়িতে থাকেন। এক ভাই দেখালেন, তাঁর ঘর ঠিক আছে। তবে পাকা বাড়ির রান্নাঘরের দেওয়াল নাকি ভেঙে গিয়েছিল। তাঁদের দাবি, কয়েক দিন আগে সেই দেওয়াল ফের তৈরি করা হয়েছে। যদিও দেওয়াল দেখে নতুন তৈরি কিনা বোঝা গেল না। প্রশান্তর সাফাই, পুরনো ইট দিয়ে তৈরি, তাই বোঝা যাচ্ছে না।
তাঁর শ্বশুরবাড়িতেও শ্যালক ও শ্বশুরের নামে ক্ষতিপূরণ এসেছে। অথচ বাবা-ছেলে একটি পাকা বাড়িরই আলাদা ঘরে থাকেন। বাড়ির ক্ষতির বিষয়ে প্রশান্তর দাবি, শালা-শ্বশুরের ‘আলাদা সংসার’ এক বাড়ির ভিতরে। তিনি জানালেন, বাড়ির চিলেকোঠা ও পাশের রান্না ঘরের অ্যাসবেস্টসের নাকি ক্ষতি হয়েছিল।
১০২ ও ১০১ নম্বর বুথে বসবাসকারী প্রশান্তর আত্মীয় আরও কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কারও ছেলে সেনাবাহিনীতে, কারও মেয়ে পুলিশে চাকরি করেন। বড় পাকা বাড়িতে থাকেন। অথচ সেই সব বাড়ির লোকজনের নামে ঘরের ক্ষতিপূরণ টাকা এসেছে।
কয়েকজন বৃদ্ধবৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে বাগানের দিকের একখানা ভাঙা ঘর দেখিয়ে প্রশান্ত দাবি করেন, এঁরা সকলে এই ঘরে থাকেন। আমপানে ক্ষতি হয়েছে, তাই নাম পাঠিয়েছিলেন বলে জানালেন। প্রশান্তর আর এক আত্মীয় ও তাঁর স্ত্রীর নামেও টাকা এসেছে ক্ষতিপূরণের। অথচ তাঁরা থাকেন পেল্লায় দোতলা বাড়িতে।
এ দিকে, এই বুথের বাসিন্দা গৌড়েশ্বর নদী বাঁধের পাশে ঝুপড়ির মধ্যে থাকা দুর্গাপদ মিস্ত্রি বলেন, “দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতাম। লকডাউনের পর থেকে কাজ বন্ধ। এ দিকে, আমপানে ঘেরা ঘর উড়ে গিয়েছিল। ত্রিপল পেয়েছিলাম। তবে আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি।” বীণার বুথের বাসিন্দা রতন বিশ্বাস, সুলেখা প্রধানদেরও একই অবস্থা।
বীণা বলেন, ‘‘যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁরা দ্রুত পাবেন। ওঁদের নাম পাঠানো আছে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা পুষ্পেন্দু রায় বলেন, ‘‘চূড়ান্ত স্বজনপোষণ হয়েছে। যা নিয়ে গ্রামে কয়েক দিন আগে পোস্টারও পড়েছিল। যাঁদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা, তাঁরা অনেকে কোনও টাকা পাননি। অথচ, পঞ্চায়েত সদস্যের আত্মীয়েরা এত এত টাকা পেয়ে বসে আছেন।’’
এ বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বজনপোষণের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ ফেরত দিতে বলা হবে।”