সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এ বার নমঃশূদ্র মতুয়া, উদ্বাস্তু মানুষের মন পেতে আসরে নেমে পড়ল তৃণমূল। ফাইল ছবি।
তৃণমূল বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে থাকা পাঁচটি বিধানসভা আসন মতুয়া বা উদ্বাস্তু অধ্যুষিত। গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে এক মাত্র স্বরূপনগর কেন্দ্র ছাড়া বাকি চারটি আসনে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছিল। যে কোনও ভোটেই এই তল্লাটে উদ্বাস্তু-মতুয়ারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে উদ্বাস্তু-মতুয়াদের বেশিরভাগ সমর্থন পেয়েছিল পদ্ম শিবির।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এ বার নমঃশূদ্র মতুয়া, উদ্বাস্তু মানুষের মন পেতে আসরে নেমে পড়ল তৃণমূল। সোমবার বাগদার হেলেঞ্চায় তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সেলের প্রথম জেলা কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন দলের নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সেলের রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত সরকার, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সেলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত বিশ্বাস, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি নিরুপম রায়। কর্মী সম্মেলনে মতুয়া ভক্ত, পাগল, গোসাঁই, দলপতিরাও এসেছিলেন। সুজিতের দাবি, প্রায় এক হাজার কর্মী এসেছিলেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্মেলনে আগামী পঞ্চায়েত ভোটের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রঞ্জিত বলেন, "হেলেঞ্চায় প্রাথমিক ভাবে নমঃশূদ্র মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষকে নিয়ে কর্মী সম্মেলন হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমরা ঠাকুরনগর, স্বরূপনগর, হাবড়া এবং অশোকনগরেও কর্মী সম্মেলন করব। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বড় জমায়েত করে সভা করব নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু মানুষদের নিয়ে।’’
ঠাকুরনগর, স্বরূপনগর, হাবড়া, অশোকনগরে প্রচুর উদ্বাস্তু মানুষ বসবাস করেন। রঞ্জিত দাবি করেন, "নমঃশূদ্র, মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের দীর্ঘ দিনের সমস্যা ছিল জমির পাট্টা না পাওয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ লক্ষ পরিবারকে পাট্টা দিয়েছেন। এখানকার মানুষও তা পেয়েছেন। এক মাত্র মুখ্যমন্ত্রীই মতুয়া নমঃশূদ্র উদ্বাস্তুদের পাশে থেকে অনেক কাজ করেছেন। যা স্বাধীনতার পরে আর কেউ করেননি।" তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে সুজিতকে নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সেলের সভাপতি করা হয়। পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট না করে ইতিমধ্যেই নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সেলের ব্লক সভাপতিদের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা নিজেদের মতো কাজ শুরু করতে পারেন। ভোটের আগে সংগঠন মজবুত করাই এর লক্ষ্য বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সুজিত বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের মূল সংগঠনকে আরও বেশি করে সহযোগিতা করা আমাদের লক্ষ্য।" তাঁর দাবি, উদ্বাস্তু মানুষকে কোনও রকম হয়রান বা উচ্ছেদ করা যাবে না। উচ্ছেদ করতে হলে আগে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃণমূলের এই চেষ্টা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের বিধায়ক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন মজুমদার বলেন, "বনগাঁ মহকুমায় নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বেশি। গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের ভাঁওতাবাজিতে ভরসা করেন না। যে মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের আরাধ্য দেবতাকে ব্যঙ্গ করার পরেও ক্ষমা চান না, যে মুখ্যমন্ত্রী সিএএ বিরোধিতা করেন— মতুয়ারা ভোটে তাঁকে বুঝিয়ে দেবেন। এই মলম দিয়ে কোনও লাভ হবে না।"