ভোট-পর্ব: উপরে, সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বচসা অবজার্ভারের। ছবি: শৌভিক দে
কালো শর্টস, আর ধূসর স্লিভলেস উলের জ্যাকেট। কানে গোঁজা ইয়ারফোন। হাতের দু’টি ফোনে অনবরত ফোন আসছে, যাচ্ছে।
কাউকে পরিষ্কার বাংলায়— “সব খবর ঠিক আছে তো? কোথাও কোনও অসুবিধা হলে জানাবি।”
কাউকে আবার ভোজপুরিতে — “কা খবর বা, সব ঠিক বা? বড়িয়া হ্যায়। চলো, লাগে রহো।”
তিনি অর্জুন সিংহ। ভাটপাড়ার বিধায়ক এবং পুরপিতা। নোয়াপাড়া বিধানসভার ঠিক বাইরে, ব্যারাকপুর ঘুসিপাড়া এলাকার একটি হোটেলের ‘১০ ফুট বাই ১০ ফুট’ ঘরে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। আর দু’পাশে অর্জুন আর পার্থকে নিয়ে একেবারে সারথির মতই রথ চালালেন আরেকজন। দলের জেলা সম্পাদক, তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)।
সোমবার এটাই ছিল নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ‘ওয়ার রুম।’ বাইরেও ছিল ‘ওয়ার রুম’। নোয়াপাড়া কেন্দ্রে ঢোকার মুখে। বারাসতের দিকে নীলগঞ্জ মোড়ে ঘাঁটি গেড়েছিলেন মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ, ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, বারাসতের চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়, ভাইস চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়ের মত নেতারা। শিউলি এলাকায় রইলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের অন্যেরা। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী দলের তাবড় নেতারা কেউ সীমা লঙ্ঘণ করেননি। ভোট নিয়ন্ত্রিত হল এলাকার ঠিক পাশ থেকেই।
আগে থেকেই ঠিক ছিল ভোট নিয়ন্ত্রণ করবেন অর্জুন। তিনি এদিন সরাক্ষণ ব্যস্ত রইলেন ফোনে— ভোট তদারকিতে। বেলা বাড়তে সেখানে হাজির হলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, স্বরূপনগরের নারায়ণ বিশ্বাস। তাঁদের নিয়েই ঘুঁটি সাজিয়ে ভোট করলেন জ্যোতিপ্রিয়। তাঁর ফোনেও আসছে নানা খবর। কাগজে নোট নিচ্ছেন, ফোন তুলে নির্দেশ দিচ্ছেন। সাংবাদিকদের দেখে তিনি-সহ ‘ওয়ার রুমে’র অন্যেরা বলছেন, “দেখছ তো, কেমন শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনও গোলমাল নেই।”
কিন্তু কোথাও বিরোধী চোখে পড়ছে না তো? জবাবে সপাটে অর্জুনের বাউন্ডারি, “ওদের লোক কোথায়—? সেই অক্ষমতা ঢাকতে ওরা নানা অভিযোগ তুলছেন।”
বহিরাগতদের বাড়াবাড়ি নিয়ে সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায় যে অভিযোগ করেছেন তা শুনে কৃষ্ণের মত ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝোলে জ্যোতিপ্রিয়র। বললেন, ‘‘কোথায়, একবারও আমাদের কেউ বাইরে বেরিয়েছে? আরে, ওকে রুটি, আলুর দম দে-।’’