তৃণমূল সভা এবং মিছিল করতে চেয়ে অনুমতি পায়নি। কিন্তু আইএসএফ কী ভাবে মিছিল করল? ভাঙড়ের পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে, এই আশঙ্কা করে প্রশাসনের দিকে আঙুল তুললেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। অন্য দিকে, অবিলম্বে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির মুক্তি না হলে ভাঙড়ে ‘বৃহত্তর আন্দোলন’-এর হুঁশিয়ারি দিয়েছে আইএসএফ।
বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের হাতিশালায় আইএসএফ এবং তৃণমূলের সংঘর্ষের পাঁচ দিন পর প্রতিবাদ মিছিল বের করে আব্বাস সিদ্দিকির দল। ভাঙড় থানার বড়ালি এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় মিছিল করে আইএসএফ। দলের কর্মীসমর্থকরা কালো ব্যাজ পরে মিছিলে হাঁটেন। তাঁদের দাবি একটাই— বিধায়ক নওশাদ-সহ ধৃত আইএসএফ নেতাদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। এই নিয়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ভাঙড় থানার পুলিশ।
এই মিছিল থেকে আইএসএফ নেতাদের দাবি, গত ২১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ‘ভাইজান’ নওশাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে আরও বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিল আইএসএফ। মহম্মদ সাদ্দাম নামে এক আইএসএফ নেতার কথায়, ‘‘কংগ্রেস, বাম জমানায় কোনও পিরজাদাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তৃণমূল সরকারের কী ভাবে এই সাহস হল! আমরা নিঃশর্তে ভাইজান নওশাদের মুক্তি চাই। তাঁকে ছাড়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের অভিযোগ, আইএসএফের জন্যই ভাঙড়ের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সবাই জানেন ভাঙড়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। যে কোনও কারণে প্রশাসন আমাদের মিছিল করতে অনুমতি দেয়নি। কলকাতা পুলিশ এবং জেলা পুলিশের নির্দেশে আমারা সভা বাতিল করেছি। তা হলে বৃহস্পতিবার প্রজাতন্ত্র দিবস এবং সরস্বতী পুজোর দিন কী ভাবে মিছিল করা হল?’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘যে কোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা হতে পারে। প্রশাসনের উচিত, এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করা।’’
গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙড়ে রাজনৈতিক অশান্তি চলছে। গত শনিবার বিদায়ক নওশাদের ধর্মতলা থেকে গ্রেফতারির পর এই চাপান-উতোর চরমে পৌঁছোয়। বিভিন্ন জায়গায় মিটিং-মিছিলের ডাক দিয়েছে আইএসএফ। বুধবার শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেছে তারা। রাজ্যের পুলিশ অনৈতিক ভাবে বিরোধী দলের বিধায়ক এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ আইএসএফ নেতাদের। দলের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকির অভিযোগ, তাঁদের এক জন বিধায়ককেই ডরাচ্ছে শাসক দল। গণতন্ত্রকে শেষ করে দিচ্ছে তৃণমূল। তাঁর এ-ও অভিযোগ, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি-সহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ আইএসএফের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন। এটাই তৃণমূলকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। অন্য দিকে, আইএসএফের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে সিপিএম।
অন্য দিকে, বুধবার ভাঙড়ে সভা এবং মিছিল করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছু হটে তৃণমূল। পুলিশের নির্দেশ ছিল ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ভাঙড়ে কোনও রাজনৈতিক দল জমায়েত করতে পারবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার কী ভাবে আইএসএফ মিছিল করল, এ নিয়ে প্রশাসনকে একহাত নিলেন শাসক দলের নেতা আরাবুল।