আহত তৃণমূল নেতার চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।
আবার রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলি ব্লকে। কুলতলির গোপালগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪৩ নম্বর বুথের তৃণমূল সভাপতি সনাতন নাইয়ার অভিযোগ, কৈখালী থেকে ভোট প্রচার করে বাড়ি ফেরার সময় বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের উপর হামলা চালান। তাতে তিনি এবং তাঁর সহকর্মী রাজারাম নস্কর গুরুতর আহত হয়েছেন। গুরুতর জখম অবস্থায় সনাতন এবং রাজারামকে উদ্ধার করে জয়নগর কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন তাঁরা।
অন্য দিকে, হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, তাদের কর্মীদের উপরেও হামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করছে পুলিশ। কয়েক দিন আগেই তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষে কুলতুলি ব্লকের গুড়গুড়িয়া ভুবনেশ্বরী এলাকায় আহত হন দু’পক্ষের অন্তত ১০ জন৷ গুরুতর আহত এক বিজেপি কর্মীকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ এ নিয়ে দু’পক্ষই কুলতুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে৷ তার পরে আবার রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল এলাকায়। বস্তুত, মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা জায়গা থেকে অশান্তির খবর মিলেছে। ভোটের তিন দিন আগে ক্যানিং থানা এলাকায় রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয়েছে বোমাভর্তি ব্যাগ। মেরিগঞ্জে এক সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএম প্রার্থীর পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে পুলিশের সামনেই তৃণমুল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের আক্রমণ করে। বাড়ির মহিলা এবং শিশু সদস্যকেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, মেরীগঞ্জ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী করেছে মাসুদুর রহমানকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার স্ত্রী মাসুদা ঘরামিকে বন্দুক দেখিয়ে বিধবা করার হুমকি দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওর মোবাইলও ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছি। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না।’’ আক্রান্ত সিপিএম প্রার্থীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ঘটনাস্থলে যান বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘থানা অভিযোগ না নেওয়ায় বিষয়টি সরাসরি পুলিশ সুপারের কাছে জানাব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমন হলে মানুষই দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ করবে।’’ অন্য দিকে, হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
এ ছাড়া পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির প্রার্থী নুরজাহান বিবির বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভাঙড়-২ ব্লকের রঘুনাথপুর গ্রামের ১৯৭ নাম্বার বুথের আইএসএফ প্রার্থী ভারতী মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলে কাশীপুর থানার পুলিশ পৌঁছয়। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘পোলেরহাট-২ এলাকায় জমি কমিটি তৃণমূলের পতাকা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বাড়িতে হামলা করছে। হুমকি দিচ্ছে।’’
বস্তুত, এক দিন আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার অশান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি ভোটের আগে এই হিংসার ঘটনার সমালোচনা করেন। নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনকে বার্তা দেন। কিন্তু রাজ্যপাল বাসন্তীর যে এলাকায় এসেছিলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে ওই এলাকাতেও বোমাবাজি হয়েছে। বাসন্তীর কাঁঠালবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খেরিয়া উত্তর ভাঙনখালি গ্রামে মুহুর্মুহু বোমা ছোড়া হয়। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় বাসন্তী থানার পুলিশ। তবে পুলিশ এলেও এলাকার মানুষের আতঙ্ক কাটছে না।