—প্রতীকী চিত্র।
দাঁড় করানো হল একাধিক বাস। বাসে উঠে যাত্রীদের নামিয়ে শুরু হল তল্লাশি। ততক্ষণে রটে গিয়েছে, তৃণমূলের চোখে ধুলো দিয়ে মিছিল না করে বাসে চেপে আইএসএফের লোকজন ব্যক্তিগত ভাবে যাচ্ছেন মনোনয়ন জমা দিতে। নলমুড়ি এলাকায় দাঁড় করানো হয় একাধিক বাস। পরে অবশ্য বোঝা যায়, ঘটনা এমন কিছু নয়। তবে ততক্ষণে যাত্রীদের ভোগান্তি যা হওয়ার হয়েছে। মনোনয়ন ঘিরে বুধবার দিনভর উত্তেজনা ছিল ভাঙড় ১ ব্লকে। দু’পক্ষের দফায় দফায় মারপিট হয়েছে। বোমা পড়ে প্রচুর। জখম হন দু’পক্ষের অনেকে। আক্রান্ত হন পুলিশ, সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।
তৃণমূলের বাধায় এ দিন আইএসএফ প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। বেলা ১১টা নাগাদ আইএসএফ দলবল নিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য নারায়ণপুরের বালিগাদা এলাকায় এলে তৃণমূল তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। বোমা পড়ে। পুলিশের চারটি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। ইটের ঘায়ে জনা ছয়েক পুলিশকর্মী জখম হন। ভাঙড় থানার আইসি সৈয়দ রেজাউল কবীরের বুকে ইট লাগে। সাব-ইন্সপেক্টর রিফাজুল মণ্ডলের হাতের হাড়ে চিড় ধরে।
মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বড়ালি ঘাট এলাকায় বাসন্তী হাইওয়েতে কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেছিল আইএসএফ। সেই অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।
এ দিকে, দলীয় কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর, তাদের মারধরের প্রতিবাদে তৃণমূল নলমুড়ি এলাকায় বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করে দেয়। ঘণ্টা দেড়েক পথ অবরুদ্ধ ছিল। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রখর রোদে প্রায় ৪ কিলোমিটার হেঁটে অনেককে ঘটকপুকুরে পৌঁছতে হয়েছে।ইতিমধ্যে রটে যায়, আইএসএফের লোকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাসে করে ভাঙড় ১ ব্লক অফিসে আসার চেষ্টা করছেন মনোনয়ন জমা দিতে। তৃণমূলের কর্মীরা বিভিন্ন বাসে উঠে তল্লাশি চালাতে থাকে।
গন্ডগোলের খবর পেয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পুষ্পাকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙড় ১ ব্লকে আসেন ডিআইজি (দক্ষিণবঙ্গ) আকাশ মাঘারিয়া, এডিজি আইনশৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্তা। তাঁরা নির্বাচনী অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করে চলে যান। অশান্তি রুখতে এক সময়ে ড্রোনে নজরদারি চালায় পুলিশ। পুলিশের উপরে হামলা, মারধর, গাড়ি ভাঙচুর, কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সাত জন আইএসএফ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তৃণমূলের ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নাম করে নওশাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আইএসএফ সন্ত্রাস চালাচ্ছে। ওদের মারে আমাদের ১৪-১৫ কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চলেছে। ওরা যদি আমাদের দিকে বোমা ছুড়তে থাকে, তা হলে আমরা নিশ্চয়ই রসগোল্লা ছুড়ব না!’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা সংযত আছি বলেই ওরা ভাঙড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’ ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘সারা দিন ধরে তৃণমূল সন্ত্রাস করেছে। সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের এনে তাণ্ডব চালিয়েছে।’’