গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের অনুগামীদের সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে তৃণমূলেরই এক কর্মীর। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে ওই ঘটনায় খড়দহ থানার আইসি রাজকুমার সরকারের কাছ থেকে জোর ধমক খেয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর। সেই পুলিশ অফিসারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকার সাংসদ অর্জুন সিংহ। পাশাপাশি, বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে আবার তৃণমূলে ফেরা সাংসদ দলের একাংশেরও সমালোচনা করলেন। তাঁর দাবি, তিনি সাংসদ হিসাবে মানুষের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু দলের (তৃণমূলের) কাজকর্ম, শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি দেখেন তাপস রায়ের মতো নেতারা। অর্জুনের আরও দাবি, চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে খড়দহ থানার আইসি যদি কাজ করে যান, অপরাধীরা ধরা পড়বেনই।
রবিবার দুপুরে টিটাগড়ের পুরানিবাজারে দুই কাউন্সিলরের অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে তৃণমূল কাউন্সিলর বিকাশ সিংহের অনুগামী বলে পরিচিত আকাশ প্রসাদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। সূত্রের খবর, এলাকা দখল নিয়ে দুই কাউন্সিলরের বিবাদ ছিল। রবিবারের সংঘর্ষের ঘটনাও সেই কারণেই। ঘটনাস্থলে যান খড়দহ থানার আইসি। তাঁর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় তৃণমূল কাউন্সিলর সোনু সাউয়ের। টিটাগড় পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সোনুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি এসে আমাকে ধমকাবেন, এটা ঠিক না।’’ তার পাল্টা আইসিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তোমার ধমক শোনার জন্যও বসে নেই আমি। তোমার মতো ৪৪ খানা কাউন্সিলর আছে আমার। বেআইনি কাজ করবে না।’’ তিনি ভর্ৎসনার সুরে কাউন্সিলরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসাবে ঠিক কাজ করছেন না তাঁরা। আইসি রাজকুমারের কথায়, ‘‘আজকে যেটা করেছ, পাড়ার গুন্ডারাও এ রকম করে না। ইলেকটেড মেম্বার (নির্বাচিত সদস্য) তোমরা দু’জন। মারামারি করছ। রাস্তায় পাবলিক দেখছে। হোয়াট ইজ় দিস?’’
ওই ঘটনার পর থেকে সোমবারও থমথমে এলাকা। আকাশের মৃতদেহ এলাকায় নিয়ে এলে যাতে কোনও অশান্তি না ছড়ায়, তার দিকে নজর রেখেছে পুলিশ। পুলিশ দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এই খুনের ঘটনা নিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন আইসির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তাঁর কথায়,‘‘খড়দহের আইসির ট্র্যাক রেকর্ড দেখেছি। তিনি অ্যান্টি ক্রিমিনাল অফিসার। এক বার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, জনপ্রতিনিধিরা এক্সটরশন করবেন না। আমি জানি, ওঁর মেরুদণ্ড সোজা আছে। ঘুষ-ফুস খান না। হি ইজ় আ গুড অফিসার। চেষ্টা করছেন এলাকায় কাজ করার।’’
গত অগস্ট মাসে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। তাতে আইসি রাজকুমারকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সিএম অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, তাঁর নির্দেশ, মানুষের জন্য কাজ করো, পাড়ায় গিয়ে কাজ করো। অসামাজিক কাজ করবে না, তোলাবাজি করবে না। এটা যেন কোনও ভাবে প্রশ্রয় না পায়।’’ এই কথাগুলি যখন তিনি বলছেন, তখন তাঁর পাশে একই মঞ্চে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীকেও। বিধায়কের সামনে পুলিশ অফিসার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ‘দাওয়াই’ দেন, ‘তোলাবাজি করবেন না’— এই ভিডিয়ো দেখে তাঁর প্রশংসা করেছেন অর্জুন। তিনি বলেন, ‘‘প্রেশার (চাপ) না থাকলে তিনি (আইসি) অ্যারেস্ট করে নেবেন। জানেন তো, ব্যারাকপুরের রাজনীতি। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কল সেন্টারের ঝামেলা হতে পারে। ঘরে তালা দেওয়া নিয়েও হতে পারে। তবে প্রশাসনের উচিত, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা।’’ কিন্তু এলাকার সাংসদ হিসাবে তিনি কী ভাবে দেখছেন এই ঘটনাকে? অর্জুন বলেন, ‘‘আমার সংসদ এলাকা ঠিকই। কিন্তু আমি তো দলের কাজ দেখি না। তার জন্য তাপস রায় আছেন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন আছেন। আমি সাংসদ হিসাবে মানুষের কাজ করি। চেষ্টা করি, এলাকা যাতে শান্ত থাকে। তবে আবারও বলছি, যদি কোনও চাপ না থাকে ওই অফিসার অভিযুক্তদের অ্যারেস্ট করবেন।’’ সাংদের সংযোজন, ‘‘প্রবলেম (সমস্যা) হল, যারা রাজনীতিতে কোনও দিন ছিল না, তারা রাজনীতিতে এসে এখনও নিজের অতীত ভুলতে পারছে না।’’