বন দফতরের খাঁচায় ধরা পড়া বাঘিনী। ছবি: বন দফতর
গত এক বছরে সুন্দরবনে আঠেরো জন মৎস্যজীবী বাঘের কবলে পড়েছেন। বিশেষ করে লকডাউন শুরুর পর থেকে জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে সুন্দরবনের কুমিরমারি, সাতজেলিয়া, লাহিড়ীপুর, বালি এলাকার একের পর এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু ঘটেছে বাঘের আক্রমণে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মৎস্যজীবীদের জঙ্গলে যাওয়ার উপর নজরদারি বাড়িয়েছে বনদফতর। সেই সঙ্গে যেখানে বাঘের আক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটছে, সেখানে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের গতিবিধির উপরও নজরদারি শুরু করেন বন দফতরের আধিকারিকরা। বাঘ ধরার জন্য খাঁচাও পাতা হয়। সেই খাঁচায় গত ২২ ডিসেম্বর একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘিনী ধরা পড়ে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা দেখেন, বাঘিনীর শিকার ধরার মূল দাঁত অর্থাৎ ক্যানাইন দাঁতগুলি ক্ষয়ে গিয়েছে। বনকর্তাদের অনুমান, সেই কারণেই জঙ্গলে হরিণ, বুনো শুয়োর শিকার করতে পারত না সে। বনকর্তারা বলছেন, এইরকম পরিস্থিতিতে মানুষ শিকারের দিকে ঝোঁকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এই বাঘিনীটিই মৎস্যজীবীদের আক্রমণ করত কিনা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন তাঁরা। বাঘিনীটি ধরা পড়ার পর, মৎস্যজীবীদের উপর আক্রমণ কমছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন আধিকারিকরা।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি দীপক এম বলেন, “ধরা পড়া বাঘিনীটির যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তাঁর শিকার করার মূল দাঁতগুলিও ক্ষয়ে গিয়েছে। এই দাঁত নিয়ে সে জঙ্গলের মধ্যে শিকার করতে পারছিল না বলেই আমাদের অনুমান। এই পরিস্থিতিতে সে মৎস্যজীবীদের উপর হামলা করতে পারে। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাকে ঝড়খালি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।” বয়সের কারণেই বাঘিনীটির দাঁত ক্ষয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, “গত কয়েক মাসে হরিখালি, পিরখালি এলাকায় বেশ কিছু
মৎস্যজীবী বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এই বাঘিনীটি ধরা পড়ার পর মৎস্যজীবীদের উপর আক্রমণ কমে কিনা, সেই দিকে আমরা নজর রাখছি।” মৎস্যজীবীদের সতর্ক করে তিনি জানান, জঙ্গলে না নামলেই বাঘে-মানুষে সংঘাত অনেক কমে যাবে।