Tiger Attack

বাঘে তুলে নিয়ে গেল মৎস্যজীবীকে

রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের ঝিলা ২ নম্বর জঙ্গলের কাছে রায়মঙ্গল নদীর একটি খাঁড়িতে। 

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা 

গোসাবা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৭
Share:

—ফাইল ছবি

ফের বাঘে তুলে নিয়ে গেল এক মৎস্যজীবীকে। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর নাম সুনীল কয়াল (৫৬)। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের ঝিলা ২ নম্বর জঙ্গলের কাছে রায়মঙ্গল নদীর একটি খাঁড়িতে।

Advertisement

রবিবার সকালেই গোসাবা ব্লকের লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চরঘেরি গ্রাম থেকে দুই সঙ্গীর সঙ্গে সুনীল কাঁকড়া ধরার জন্য রওনা দিয়েছিলেন। দুই সঙ্গী কৃষ্ণপদ মিস্ত্রি ও দুলাল সর্দার সঙ্গে থাকলেও তাঁরা বাঘের মুখ থেকে সঙ্গীকে ফিরিয়ে আনতে পারেননি। এই খবর গ্রামে এসে পৌঁছতেই সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। ২১ জানুয়ারি কুমিরমারির বাসিন্দা দুর্গাপদ মণ্ডলের (৫৫) বাঘের কামড়ে মৃত্যু হয়। সুন্দরবনের ঝিলা জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। ২৮ জানুয়ারি পিরখালি ২ জঙ্গলে ঝরখালির বাসিন্দা বরুণ বালা (৩২) নামে এক মৎস্যজীবীকে বাঘে নিয়ে যায়।

অভাবের কারণে সুনীলের স্ত্রী তারারানি ও দুই সন্তান কলকাতায় থাকেন। তাঁরা সেখানেই কাজকর্ম করেন। সুনীল নিজে গ্রামের বাড়িতে থেকে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্য দিনের মত রবিবার সকালে দুই সঙ্গীর সঙ্গে দাঁড় টানা নৌকায় রওনা দিয়েছিলেন জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। সকালে যখন তাঁরা একটি খাঁড়ির মধ্যে ঢুকে দোন দিয়ে কাঁকড়া ধরছিলেন, ঠিক তখন একটি বাঘ সুনীলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে টানতে টানতে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায়। দুই সঙ্গী নৌকায় বসে থাকলেও তাঁরা কিছুই করে উঠতে পারেননি।

Advertisement

কৃষ্ণপদ বলেন, “আমরা সকলে মিলে কাঁকড়া ধরার জন্য দোন ফেলছিলাম। হঠাৎ নৌকাটি খুব ঝাঁকুনি দেয়। তাকিয়ে দেখি সুনীলের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে তাঁকে টানতে টানতে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে বাঘ। ভয়ে আমরা কিছুই করে উঠতে পারিনি।’’ তাঁরা গ্রামের দিকে রওনা দেন। দুপুর নাগাদ গ্রামে ফিরে এসে প্রতিবেশীদেরকে বিষয়টি জানান। খবর দেওয়া হয় বন দফতরকেও। সেই খবর পেয়ে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তল্লাশি অভিযান চালায়। কিন্তু উদ্ধার করতে পারেননি সুনীলকে।

বন দফতর সূত্রের খবর, সরকারি অনুমতি ছাড়াই সুনীল ও তাঁর সঙ্গীরা কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সহ ক্ষেত্র অধিকর্তা অনিন্দ্য গুহ ঠাকুরতা বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

স্বামীকে বাঘে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার সকালেই গ্রামে এসে পৌঁছেছেন তারারানি। স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। তারারানি বলেন, “জঙ্গলে বিপদ বলেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে কলকাতায় কাজে গিয়েছি। ওঁনাকে বারে বারে বলেছি জঙ্গলে বিপদ, ওকাজ ছেড়ে দাও। কিন্তু শোনেননি। আমার কথা শুনলে আজ এই বিপদ হত না।’’ এই ঘটনায় নিখোঁজ ওই মৎস্যজীবীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নিরাঞ্জন মণ্ডল বলেন, “আমরা ওই পরিবারের পাশে আছি। সব রকম ভাবে ওঁদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement