মৃত অপূর্ব ঘোষ (বাঁ দিকে), এই বাড়িতে বসেছিল আসর (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
রীতিমতো পরিকল্পনা করে প্রথমে খুন। তার পরে সৎকারের সময়েও সেখানে উপস্থিত থাকল খুনি! এমনকি খুন হওয়া যুবকের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে সময় কাটালেও, শেষরক্ষা হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল খুন হওয়া যুবকের নিজের দিদি, জামাইবাবু এবং জামাইবাবুর মামা!
বুধবার রাতে দক্ষিণেশ্বরে নিজের বাড়িতেই ইঞ্জিনিয়ার অপূর্ব ঘোষকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় শুক্রবার সকালে ওই যুবকের দিদি অলক্তিকা দাস, জামাইবাবু সুদীপ দাসকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার রাতে ভাইয়ের খুনের খবর পেয়ে স্বামী সুদীপকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে যায় অলক্তিকা। তার পর থেকে এ দিন পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিল। ওই দু’জনকে জেরা করে সুদীপের মামা সঞ্জীব পাত্রকেও বড়বাজার এলাকা থেকে এ দিন ধরা হয়। এসিপি (বেলঘরিয়া) শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করেছে। মূলত সম্পত্তি সংক্রান্ত বচসা ও তার জেরে আক্রোশ থেকেই এই খুন।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, একটা সময়ে নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন অপূর্ব। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক ফলের দোকান, রেস্তরাঁ, ফ্ল্যাট ও বছর তিনেক আগে তৈরি বাড়ি— এই সব সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে অপূর্বর সঙ্গে ঝামেলা লেগেই ছিল দিদি অলক্তিকার। জানা যাচ্ছে, পুলিশি জেরায় অলক্তিকা সেই ঝামেলার কথা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি দাবি করেছে, অপূর্ব সব সময়ে দাবি করতেন, সমস্ত সম্পত্তির মালিক তিনি একা। সম্পত্তিতে ভাগ বসানোর জন্য অলক্তিকা যেন দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে না আসে, তা নিয়েও হুমকি দিতেন অপূর্ব। যদিও দিদি-ভাইয়ের ঝগড়ায় আমল দিতেন না তাঁদের বাবা-মা।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ১ জুন অলক্তিকা ও সুদীপ দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে ছিল। সেখানে পরিবার নিয়ে আসে সঞ্জীব। রাতে বসা নেশার আসরে সঞ্জীবকে গালিগালাজ করেন অপূর্ব। এমনকি, নেশামুক্তি কেন্দ্রে থাকার সময়ে মাফিয়াদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছে বলেও তিনি হুমকি দেন বলে দাবি অভিযুক্তদের। এর প্রতিবাদ করে সঞ্জীব। ঝামেলা বাড়তে থাকায় রাতেই অলক্তিকারা অ্যাপ-ক্যাব বুক করে হুগলির বাড়িতে ফিরে যায়। তদন্তে জানা গিয়েছে, পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য তখনই স্বামী ও মামাশ্বশুরের সঙ্গে পরিকল্পনা করে অলক্তিকা।
সূত্রের খবর, ১২ জুন রাতে শেওড়াফুলিতে সঞ্জীবের বাড়িতে নেশার আসরে যোগ দেয় অলক্তিকা ও পেশায় বাউন্সার সুদীপ। সেখানে ফের আলোচনা করেই বাইকে দক্ষিণেশ্বরে চলে আসে সুদীপ ও সঞ্জীব। বাড়িতে ঢুকে অপূর্বকে দু’জনে কুপিয়ে খুন করে পৌনে বারোটা নাগাদ বেরিয়ে অলক্তিকাকে ফোনে জানিয়ে দেয় তারা। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়ার কথা। সেই সূত্রেই তদন্তের জাল গোটায় পুলিশও।