রেলপথের প্রস্তাব ফেরাচ্ছে ছেলেবেলার স্মৃতি

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শেষ রেল স্টেশন পেট্রাপোল। তার আশপাশেই বাড়ি সত্তর ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ অখিলচন্দ্র হালদারের। তাঁর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারিপুরে। অখিলবাবু জানালেন, ১৯৫৮ সালে তিনি পরিবারের সকলের সঙ্গে এ দেশে চলে এসেছিলেন। এসেছিলেন পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে, ট্রেনে। পরবর্তী সময়ে অবশ্য ওই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ওই পথে কিছু ট্রেন যাতায়াত করেছে। কিন্তু তাতে সাধারণ যাত্রীদের তোলা হত না বলে রেল সূত্রের খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০১
Share:

অপেক্ষার পথ। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শেষ রেল স্টেশন পেট্রাপোল। তার আশপাশেই বাড়ি সত্তর ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ অখিলচন্দ্র হালদারের। তাঁর জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মাদারিপুরে। অখিলবাবু জানালেন, ১৯৫৮ সালে তিনি পরিবারের সকলের সঙ্গে এ দেশে চলে এসেছিলেন। এসেছিলেন পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে, ট্রেনে। পরবর্তী সময়ে অবশ্য ওই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ওই পথে কিছু ট্রেন যাতায়াত করেছে। কিন্তু তাতে সাধারণ যাত্রীদের তোলা হত না বলে রেল সূত্রের খবর।

Advertisement

এলাকার প্রবীণ মানুষেরা জানলেন, ১৯৬২ সাল নাগাদ যাত্রীবাহী ট্রেন এখান থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রেল লাইনের পাতি কেটে দুষ্কৃতীরা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফের যাত্রী চলাচল শুরু হলে অনেকে ছোট ব্যবসা করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন। পেট্রাপোল এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধাও বাড়বে। তা ছাড়া, বয়স্ক মানুষদের স্মৃতিকাতরতার যুক্ত তো আছেই!

পেট্রাপোল থেকে খুলনার মঝ্যে ফের ওই পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ব্যাপারে খোঁজখবর করতে শনিবার সকালে যখন রেলের কর্তারা পেট্রাপোল স্টেশন পরিদর্শন করছিলেন, তখন অখিলবাবু খবর পেয়ে স্টেশন চত্বরে হাজির। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ। বললেন, ‘‘শৈশবে পেট্রাপোল থেকে ট্রেনে বনগাঁয় সিনেমা দেখতে যেতাম। আমাদের স্টেশনের কাছেই হোটেল ছিল। রেলের লোকজন শুল্ক দফতরের লোকজন ও যাত্রীদের ভিড়ে স্টেশন চত্বর গমগম করত। যাত্রীদের এখানে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হত পাসপোর্ট পরীক্ষা করানোর জন্য।’’ ফের ট্রেন চালু হওয়ার খবরে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। জানালেন, সুযোগ পেলে ফের ছেলেবেলার পথে্ একবার ট্রেনে ফরিদপুরে যেতে চান।

Advertisement

শুধু অখিলবাবুই নন, তাঁর মতো বহু ও পার বাংলা থেকে আসা মানুষ চাইছেন ফের এই পথে চালু হোক যাত্রীবাহী ট্রেন। পুষ্প অধিকারী নামে এক প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘আমাদের বাড়ি ছিল যশোরে। সেখানে মামারা এখনও আছেন। শৈশবে পেট্রাপোল থেকে ট্রেনে চেপে বনগাঁয় গিয়েছি কত বার। ফের ট্রেন চালু হলে ওই পথে যশোরে যেতে চাই।’’ পুষ্পদেবী জানালেন, সে সময়ে ছিল কয়লার ইঞ্জিন। খুবই আস্তে চলত ট্রেন। বনগাঁয় ট্রেন থেকে কয়লা নামানো হত। তবে লোকজনের টিকিট কাটার তেমন বালাই ছিল না বলেই জানালেন তিনি।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ রেল কর্তারা বনগাঁ স্টেশন থেকে ডিজেল চালিত এক কামরার টাওয়ার ভ্যানে করে পেট্রাপোল স্টেশনে পৌঁছন। সেখানে তাঁরা স্টেশনের পরিকাঠামো ঘুরে দেখেন। পেট্রাপোল স্টেশন দিয়ে এখন বাংলাদেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন যাতায়াত করে। ফলে ওই স্টেশনে পরিকাঠামো এমনিতেই কিছুটা তৈরি। পেট্রাপোল স্টেশন থেকে প্রতিনিধি দলটি টাওয়ার ভ্যানে করে যান সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। ওই এলাকায় ম্যাপ বের করে তাঁরা ঘুরে দেখেন। পরে পেট্রাপোল শুল্ক দফতরে, শুল্ক, অভিবাসন, জিআরপি, আরপিএফ ও বিএসএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রেল কর্তারা বৈঠক করেন। ট্রেনেই তাঁরা বনগাঁয় ফিরে আসেন দুপুর ২টো নাগাদ। রেল সূত্রের খবর, শনিবার আলোচনা হয়েছে মূলত পরিকাঠামো নিয়ে। পেট্রাপোল স্টেশনে জিআরপি, আরপিএফ, অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের অফিস করতে হবে। জিরো পয়েন্ট থেকে পেট্রাপোল স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রেল পথে একটি করিডরে তৈরি করতে হবে। ট্রেনটি এ দেশে ঢোকার পরে কেউ যাতে ট্রেন থেকে নামতে না পারে, সে জন্য দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। তবে বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে, পরিকাঠামো তৈরি করতে অর্থ ব্যয় করবে কেন্দ্রের কোন দফতর তা নিয়ে।

সে সব জটিলতা নিয়ে অবশ্য এলাকার মানুষ ভাবতে রাজি নন। তাঁরা চান দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement