অব্যবস্থা: মিলছে না পরিষেবা, ভবনও ঢেকেছে আগাছায়। নিজস্ব চিত্র
বেলা দেড়টা বাজে। ওষুধ দেওয়ার কাউন্টারের সামনে কেউ নেই। চিকিৎসকের ঘর ফাঁকা। ফার্মাসিস্ট উপস্থিত নেই। রোগীর দেখাও নেই বললেই চলে।
ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের পশ্চিম ভবানীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা বেশিরভাগ দিন থাকে এমনই।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের নুরপুর পঞ্চায়েতে স্থানীয় এক বাসিন্দার ৬ বিঘা দানের জমিতে পশ্চিম ভবানীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। ১৯৮০ সালে অনুমোদন পাওয়া ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, নার্স এবং ফার্মাসিস্ট নিয়মিত থাকায় জন্য তৈরি হয়েছিল ছ’টি আবাসন। শুরুতে পরিষেবা ঠিকঠাক থাকায় রোগীর সংখ্যা ছিল ভালই। কিন্তু যতদিন এগোচ্ছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামো নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান এখানে স্থায়ী চিকিৎসক নেই। একজন অস্থায়ী চিকিৎসক পরিষেবা দিচ্ছেন। অস্থায়ী ফার্মাসিস্ট আছেন। ২ জন নার্স ও অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী একজন আছেন। ওই কর্মীকে হাসপাতাল চত্বর সাফসুতরো রাখা থেকে শুরু করে রোগীর নাম লেখার কাজও মাঝে মধ্যে করতে হয়। চিকিৎসক না এলে নার্সকেই ওষুধপত্র দিতে হয়। সঙ্কটজনক রোগী এলেই ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।।
হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর নেই। সরকারি জমিতে সন্ধ্যার পরে মদ-গাঁজার আসর বসে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার আবাসন ব্যবহার না হওয়ায় ভেঙে পড়ছে। দরজা-জানলার পাল্লা লোপাট হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিছনের চত্বর আগাছায় ভরা। সেখানে সাপখোপের বাসা।
২০১১ সালে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের ঝকঝকে একতলা ভবন তৈরি হয়। ১১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য ওই ভবনটি তৈরি হয়েছিল। ২০১১ সালে ২৯ ডিসেম্বর ভবনটির উদ্বোধনের পরে প্রায় ৯ বছর কেটে গেলেও এখনও তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলা পরিষদ থেকে ভবনটি এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। তাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
৩০-৪০টি গ্রামের মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন। হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএমওএইচ ও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে।
এলাকার বাসিন্দা দেবদূত মণ্ডলের কথায়, ‘‘হাসপাতালের পরিকাঠামোর দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এক সময়ে এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল ছিলেন বহু মানুষ। এখন বাধ্য হয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।’’
ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লক মেডিক্যাল অফিসার গৌতম নস্কর বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির শয্যা চালু হওয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে। পাশাপাশি, স্থায়ী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’