লকডাউনের পক্ষে সওয়াল বহু এলাকায়
Containment Zone

গোটা বনগাঁ মহকুমায় নেই একটিও কন্টেনমেন্ট জ়োন

এই মহকুমায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পজ়িটিভ মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত মহকুমায় করোনা পজ়িটিভ ৯৯।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৫:০৬
Share:

গয়ংগচ্ছ: এ রকমই ভিড় বনগাঁর পথেঘাটে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

তা হলে কী এখানে কারও করোনা হয়নি নাকি!

Advertisement

প্রশ্ন তুলছেন বনগাঁর মানুষ। তাঁরা সকলেই বিস্মিত, বনগাঁ মহকুমার কোনও এলাকায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা না হওয়ায়।

যদিও পরিসংখ্যান বলছে উল্টো কথাই।

Advertisement

এই মহকুমায় সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পজ়িটিভ মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত মহকুমায় করোনা পজ়িটিভের সংখ্যা ৯৯ জন। অ্যাকটিভ করোনা পজ়িটিভ রোগীর ১০ জন। মহকুমার মধ্যে সব থেকে বেশি করোনা পজ়িটিভ রয়েছেন গাইঘাটা ব্লকে। সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ জন। গাইঘাটা ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

জেলা প্রশাসন গাইঘাটা ব্লকের একটিও এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় সেখানকার সচেতন মানুষ হতাশ। গাইঘাটার সিপিএম নেতা রমেন আঢ্য বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনের উচিত ছিল, গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি ভাবা।’’ গাইঘাটার বিজেপি নেতা চন্দ্রকান্ত দাস বলেন, ‘‘করোনা পজ়িটিভ মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান লুকিয়ে রাখতে গিয়েই প্রশাসন এখানে কোথাও লকডাউন করেনি।’’

গাইঘাটা ব্লকে লকডাউন যে জরুরি ছিল, তা ব্লক প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ব্লক প্রশাসনের কর্তা, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আজ শনিবার থেকে ব্লকের সমস্ত বাজারহাট আগামী ৭ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘গাইঘাটা ব্লকে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা বাজার হাট সাতদিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারহাট বন্ধ থাকলেও অত্যাবশকীয় ও জরুরি পরিষেবার দোকান খোলা থাকবে।

বনগাঁ শহরে শুক্রবার সকাল থেকে দেখা গেল, মাস্ক না পরে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের পথ আটকে মাস্ক পরতে অনুরোধ করছে পুলিশ। মাস্ক পরা না থাকলে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র মনে করছে, বনগাঁ মহকুমায় লকডাউন হওয়া উচিত। না হলে আগামী দিনে সংক্রমণ বাড়বে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মহকুমায় অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা কম। একই এলাকায় অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, এমনটা নেই। সে কারণেই এখানে লকডাউন করা হয়নি। বাস্তবের সঙ্গে হিসেবটা কিছুতেই মিলছে না ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও। দমদম থেকে টিটাগড় পর্যন্ত একাধিক এলাকাকে গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করা হলেও, ব্যারাকপুর থেকে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত কন্টেনমেন্ট জ়োন মাত্র একটি। ভাটপাড়া পুরসভার কাঁকিনাড়ার ২ নম্বর গলিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনের এমন ঘোষণায় বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা। ভাটপাড়া পুরসভারই শ্যামনগর, কাঁকিনাড়া, ভাটপাড়ায় করোনা অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন। নৈহাটি পুরসভার একাধিক এলাকায় রয়েছেন করোনা-আক্রান্ত। পলতা, ইছাপুরেও করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সেখানেও কোনও এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ এই সব এলাকার বাসিন্দারা। মাত্র ১২টি এলাকার কিছু অংশ ছাড়া আর সব জনবহুল এলাকা স্বাভাবিক থাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বসিরহাটের মানুষও। বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন হাট-বাজার, জনবহুল এলাকা খোলা। তবে বসিরহাট থানা এলাকার ৩টি জায়গা কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণার পরে শহরের বাজার খোলা থাকলেও অধিকাংশ দোকান বন্ধ। কংগ্রেস নেতা অমিত মজুমদার বলেন, ‘‘জনবহুল বাজারে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতারা শারীরিক দূরত্ব ভুলে ভিড় করেছেন।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শ্রীদীপ রায়চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘জনবহুল এলাকা খুলে রেখে এ কেমন লকডাউন! মনে হয় নজর ঘোরানোর জন্যই অপরিকল্পিত ভাবে ঘোষণা হয়েছে।’’ বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তারক ঘোষ আবার মনে করেন, আমপানের তালিকা টাঙানোর কথা বলায় বিক্ষোভের আঁচ সামলাতে না পেরে লকডাউন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে সব ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ফিরোজ কামাল গাজির বক্তব্য, ‘‘লকডাউন নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা কবে চিকিৎসক হলেন, জানি না। ওঁদের সমালোচনায় মানুষ গুরুত্ব দেয় না।’’

—সহ প্রতিবেদন: নির্মল বসু ও সুপ্রকাশ মণ্ডল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement