সরেজমিনে: ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এনআইএ-র প্রতিনিধিদল। শুক্রবার, হালিশহরে। নিজস্ব চিত্র।
হালিশহরে গঙ্গার ধারে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তভার ইতিমধ্যেই নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। তারই অঙ্গ হিসাবে শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ এনআইএ-র একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় আধ ঘণ্টা সরেজমিনে সব কিছু খতিয়ে দেখেন দলের চার প্রতিনিধি। এর পরে গোয়েন্দারা যান নৈহাটিতে এসিপি ১-এর দফতরে। সেখানে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে কেস ডায়েরি-সহ ওই ঘটনায় বাজেয়াপ্ত করা জিনিসপত্র হেফাজতে নেন তাঁরা। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন এনআইএ-র কলকাতা শাখার এসপি ধনরাম সিংহ। তিনিই এই মামলার তদন্তকারী অফিসার।
উল্লেখ্য, ২৭ জানুয়ারি হালিশহর ও নৈহাটির মধ্যে জগন্নাথ ঘাট এলাকায় ওই বিস্ফোরণে সুমিত সিংহ (১৯) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়। তাঁর দেহ এসে পড়েছিল ঘাটের পাশেই হুকুমচাঁদ চটকলের গ্যারাজের চালে। বাকি দুই তরুণ রোহিত চৌধুরী ও রোহিত সিংহের কোনও খোঁজ মেলেনি সপ্তাহ দেড়েক। গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হালিশহরের বলদেঘাটা সিদ্ধেশ্বরী ঘাটে একটি মৃতদেহের অংশ ভাসতে দেখা যায়। সেটি উদ্ধার করে ফরেন্সিক ও ডিএনএ পরীক্ষায় পাঠায় পুলিশ। তার দু’দিন পরে উত্তর বন্দর থানা এলাকায় গঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় আর একটি মৃতদেহের অংশ। উদ্ধার হওয়া দু’টি দেহাংশ নিখোঁজ দুই রোহিতের কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। যদিও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তদন্তকারীরা জানান, প্রাথমিক ভাবে পোশাকের অংশ দেখে দু’টি দেহাংশ রোহিত চৌধুরী ও রোহিত সিংহের বলে শনাক্ত করা হলেও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরেই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিস্ফোরণের ওই ঘটনার পরেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছিল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়, ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া বিট্টু জায়সওয়াল ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ। অন্য দিকে অর্জুন নিজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়ার আর্জি জানান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আমি এনআইএ-কে দায়িত্ব দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলাম।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, বিট্টু এখন ব্যারাকপুর জেলে বিচারাধীন বন্দি হিসাবে আছে। তাকেও হেফাজতে নেওয়া হবে বলে এনআইএ-র তদন্তকারীদের দাবি। এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরেজমিনে পরীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের অনুমান, মাটির নীচে পুঁতে রাখা বিস্ফোরক থেকেই সে দিন বিস্ফোরণ হয়েছিল। ওই বিস্ফোরক কারা রেখেছিল, এ বার সেই খোঁজ শুরু করবেন গোয়েন্দারা। এনআইএ-র কলকাতা শাখার এসপি তথা মামলার তদন্তকারী অফিসার ধনরাম বলেন, ‘‘আমরা পুরো ঘটনাটি নজরে রেখেছি। সরেজমিনে পরীক্ষাও হল। এ বার তদন্ত শুরু করব।’’ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (উত্তর) শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন, ‘‘এনআইএ-র বিশেষ আদালতের নির্দেশে হালিশহর বিস্ফোরণ মামলার তদন্তভার ওঁরা নিয়েছেন। আমরা কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ওঁদের হাতে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ তুলে দিয়েছি।’’