গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাড়িতেই মেয়ের পারলৌকিক কাজ সারলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খুন হওয়া চিকিৎসক-ছাত্রীর মা। রবিবার দুপুরে, সোদপুরের নাটাগড়ের বাড়িতে সেই পারলৌকিক কাজে উপস্থিত ছিলেন পারিবারিক বন্ধু, ওই তরুণীর প্রেমিক-সহ হাতে গোনা কয়েক জন। এর পরেই আর জি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের বিরুদ্ধে নিজের একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন নির্যাতিতার মা।
এ দিন ওই তরুণীর মা বলেন, ‘‘মেয়েকে চাপে রাখা হয়েছিল। ও রোগীদের চিকিৎসা করতে চাইত, কিন্তু করতে দেওয়া হত না। সিনিয়র ডাক্তারেরা সহযোগিতা করতেন না। বেশি করে কাজ করানোর চেষ্টা করত, চাপে রাখত। ও ভাল কাজ করত। সেটা ঈর্ষার কারণ হয়েছিল। রাতভর টানা ডিউটি চার জন ছেলের সঙ্গে। বিশ্রামের আলাদা ঘর নেই। দিনের পর দিন এই চাপ ও নিতে পারছিল না। এ কথা কেউ শোনারও ছিল না। শেষ দিকে আর যেতে চাইত না। গোটা বিষয়টি প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সঠিক তদন্ত চাই আর দোষীদের শাস্তি চাই।’’
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন এলাকায় মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল হয়। এইচবি টাউনের মোড়ে ধর্নামঞ্চে ন্যায়বিচারের দাবিতে অবস্থানও চলছে। এ দিন মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কামদুনি-কাণ্ডের দুই প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী ও টুম্পা কয়াল। ময়না তদন্তের রিপোর্ট ওই তরুণীর মা-বাবার হাতে তুলে দেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মা। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। বলেন, ‘‘সততার সঙ্গে স্বচ্ছ তদন্ত হচ্ছে, এইটুকু ভরসা রাখুন সবাই। শুধু এক চিকিৎসক নয়, আমার বোন বা ভাইঝির সঙ্গে এমন ঘটলে যে ভাবে দেখতাম, সেই অনুভূতি থেকেই তদন্তে এগোচ্ছি আমরা। শেষ দেখে ছাড়ব, কথা দিলাম।’’
এ দিন সন্ধ্যায় মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স ফোরাম’-এর সদস্যেরা। ওই ফোরামের সদস্য, চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী দাবি করেন, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক দেহ সৎকারের আগে পরিবারকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন বলে জানান নির্যাতিতার মা। সুবর্ণ বলেন, ‘‘বাড়ির লোক গণধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। এটা তো একার কাজ হতে পারে না। আমরা ওঁদের পাশে আছি।’’ যদিও রাতে চিকিৎসক-ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘বিভিন্ন ভাবে প্রথম দিকে আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি ও রফার কথা বলা হয়। তবে কোনও পুলিশ আধিকারিক এ ধরনের প্রস্তাব দেননি। আমরা সব সময়েই পুলিশের উপর আস্থা রেখেছি। ময়না তদন্তে জানা গিয়েছে, নিম্নাঙ্গে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে আমার মেয়েকে। আমাদের সন্দেহ, হাসপাতালের ভিতরের লোক জড়িত। যে ধরা পড়েছে, তাকে টাকা দিয়েও তো এ কাজ করানো হতে পারে।’’