গলায় মালা বহিষ্কৃত নেতার (বাঁ দিকে সাদা জামা)
দুর্নীতির অভিযোগে পুরনো দল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরেই তিনি বলছেন, ‘‘মন থেকে তৃণমূল হয়ে গিয়েছি।’’
বাদুড়িয়ার আটুরিয়া পঞ্চায়েতের সদস্য আনারুল সর্দারের নিজের কার্যালয়ে লাগিয়ে দিলেন ঘাসফুলের পতাকাও। সেখানে গিয়ে তাঁকে মালা পরিয়ে এসেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। হাজির ছিলেন ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি মিজানুর রহমান মিস্ত্রি-সহ আরও কিছু নেতা।
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস। দলের বিধায়ক আব্দুর রহিম দিলু বলেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগে আমরা যাঁকে বহিষ্কার করলাম, তাঁকেই গলায় মালা পরিয়ে বুককে টেনে নিচ্ছে তৃণমূল। ওদের দলে যে কোনও নীতি আদর্শ অবশিষ্ট নেই, তা এ ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়ে গেল।’’
আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে দলের পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নাম দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়ায় ইদানীং বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে আছে ঘাসফুল শিবির। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে মুখ্যমন্ত্রীকেও আসরে নামতে হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন এবং সমালোচনার মুখে তিনি জানিয়েছিলেন, নতুন করে ক্ষতিপূরণের তালিকা তৈরি করা হবে। ব্লক অফিসে টাঙিয়েও দেওয়া হবে সেই তালিকা। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ, অবরোধ, ঘেরাও চলছে। কোথাও কোথাও নেতারা টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তা ফেরতও দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কাছে টেনে নেওয়াকে ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও।
আনারুলের থেকে আপাতত দূরত্ব বজায় রাখার ইঙ্গিত মিলেছে বাদুড়িয়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি কবিদাস সর্দারের কথায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যোগ দিতে চাইলে তাঁকে আগে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করতে হবে। তার ভিত্তিতে মহকুমা পর্যায়ে সেই ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর নিয়ে জানানোর পরে জেলা নেতৃত্ব যদি যোগ্য মনে করেন, তবেই দলে নেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ব্লক যুব সভাপতি মিজানুর-সহ কয়েকজন নেতার উপস্থিতিতে আনারুলের গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে তাঁর দফতরে তৃণমূলের পতাকা তোলা হয়েছে।’’ কবিদাসের দাবি, বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।
ঢোঁক গিলতে হচ্ছে মিজানুরকেও। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘কংগ্রেসের ব্লক নেতা আনারুল তাঁর দলীয় কার্যালয় তৃণমূল কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তা দেখতে সকলের সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম। তবে আনারুলকে দলে নেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের কাছে তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।’’
কী বলছেন দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা?
আনারুলের কথায় ‘‘কিছু দিন ধরেই আমি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছিলাম। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে তড়িঘড়ি বহিষ্কার করা হল।’’ তাঁর মতে, ‘‘আমার তৈরি অফিস তৃণমূলের হাতে তুলে দিয়ে কোনও অন্যায় করিনি। আমি এখন মন থেকে তৃণমূলই হয়ে গিয়েছি।’’ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন বলেও জানিয়েছেন আনারুল।
সম্প্রতি একই পরিবারের ৮ জনকে আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আনারুলের বিরুদ্ধে। গত শনিবার তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ হেন বিতর্কে জড়ানো নেতার সঙ্গে তৃণমূলের একাংশের মাখামাখি দেখে বিরোধীরাও সমালোচনার সুযোগ ছাড়ছেন না।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শ্রীদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তদের স্বাভাবিক আশ্রয়ের জায়গা তৃণমূল।’’ বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তারক ঘোষের কথায়, ‘‘দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না বলে যারা সব সময়ে জাহির করে তারাই দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কৃতের গলায় মালা পরায়।’’