TMC Internal Conflict

জেলা কোর কমিটির বৈঠকে গরহাজির অভিষেক ঘনিষ্ঠ নেতারা

এক সঙ্গে জেলার এত জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার অনুপস্থিতি ঘিরে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দলের নবীন-প্রবীণের বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কোর কমিটি সম্প্রসারণ হওয়ার পরে সোমবারই ছিল কমিটির প্রথম বৈঠক। মধ্যমগ্রামে তৃণমূল কার্যালয়ে হওয়া ওই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক তাপস রায়, বিধায়ক সুজিত বসু, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ সহ অনেকেই।

Advertisement

এক সঙ্গে জেলার এত জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার অনুপস্থিতি ঘিরে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। দলের নবীন-প্রবীণের বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ দিন অনুপস্থিত তৃণমূল নেতাদের বেশিরভাগই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে রয়েছেন।

কেন বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেন নেতারা?

Advertisement

সেচমন্ত্রী পার্থ বলেন, ‘‘আমার তৃণমূল ভবনে প্রেস মিট ছিল। তাই থাকতে পারিনি।’’ নারায়ণের যুক্তি, ‘‘হাবড়া নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলাম, তাই যেতে পারিনি।’’ বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘জ্বর-সর্দি হয়েছে।’’

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এক সঙ্গে এত জনের অসুবিধা থাকা স্বাভাবিক নয়। এর পিছনে অন্য কোনও সমীকরণ কাজ করছে কি না, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। দলের একাংশ বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, ‘‘সোমবার কোর কমিটির বৈঠক আছে জেনেও নারায়ণ কেন হাবড়া নিয়ে বৈঠক করবেন? মনে হচ্ছে কোনও চালাকি আছে।’’

হাবড়ার বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে উত্তর ২৪ পরগনায় দল পরিচালনায় প্রথমে ৯ জনের কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগে দেগঙ্গার চাকলায় দলের কর্মিসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী সেই কমিটির সদস্যসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেন। কমিটিতে এমন অনেক পুরনো মুখ স্থান পেয়েছেন, যাঁদের দীর্ঘ দিন দলীয় কাজকর্মে সে ভাবে প্রথম সারিতে দেখা যাচ্ছিল না। মমতা দলের প্রবীণদের মর্যাদা দেওয়ারও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষকে।

মমতা সে সময়ে বলেছিলেন, ‘‘এই জেলায় অনেক নেতা-মন্ত্রী আছেন। সাংসদ-বিধায়কদের এই কমিটিতে আমন্ত্রণ করা হবে। প্রতি ১০ দিন অন্তর কমিটি আমাকে রিপোর্ট দেবে।’’ আলাদা ভাবে সুজিত বসুকে (দমকলমন্ত্রী) বসিরহাট ও দমদম, পার্থ ভৌমিককে (সেচমন্ত্রী) ব্যারাকপুর এবং নারায়ণ গোস্বামীকে (জেলা সভাধিপতি) হাবড়ার দিকটি দেখারও দায়িত্ব দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর আমাকে রিপোর্ট দেবে।’’ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, আগে কোর কমিটি থাকা সত্ত্বেও দলীয় কোন্দল থামানো যায়নি। সম্প্রতি জগদ্দলে একটি খুনের ঘটনার পরে সাংসদ এবং বিধায়কের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। নানা প্রান্তে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধও মাথাচাড়া দিয়েছে। কোর কমিটির সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে মমতা দলের ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেন।

কিন্তু এত কিছুর পরেও কোর কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা-মন্ত্রীর অনুপস্থিতি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৈঠকে গরহাজির এক সদস্যের কথায়, ‘‘এক সঙ্গে জেলার এত জন শক্তিশালী নেতার অনুপস্থিতির পিছনে নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে। কোর কমিটির চেয়ারম্যান নির্মল ঘোষের অতিসক্রিয়তা এর পিছনে কারণ নয় তো? উনি তো আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই যেখানে সেখানে চলে যাচ্ছেন।’’ তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নির্মল মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। পুরনো নেতাও বটে। তাঁকে জেলার তথাকথিত নবীনেরা মেনে নিতে পারছেন না বলে দলের একাংশের মত।

কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘নেতা-মন্ত্রীরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। রথীন ঘোষ দু’দিন ধরে অসুস্থ। জ্বর-সর্দি, তাই আসতে পারেননি। এটা কোনও বিষয় নয়।’’

তবে তৃণমূলের বৈঠকে নেতা-মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারছেন, তাঁর জেলযাত্রা নিশ্চিত। তাই তার সঙ্গী-সাথীরা বৈঠকে যাচ্ছেন না। আগামী দিনে তাঁরা তৃণমূল দলটাই আর করবেন না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement