রোগীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন সুপার

অস্ত্রোপচার করে হাত বাদ দেওয়া ছাড়া আর পথ ছিল না চিকিৎসকদের কাছে। এ দিকে, আহত মহিলার সঙ্গে কোনও পরিজন ছিলেন না। প্রশ্ন উঠছিল, অস্ত্রোপচারের সম্মতিপত্রে কে সই করবেন? মঙ্গলবার সাতসকালে পরিজনেদের খোঁজ করার মতো সময় ছিল না ডাক্তারবাবুদের হাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৩
Share:

অস্ত্রোপচারের পরে মায়ের সঙ্গে শিউলি অধিকারী। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে যখন রক্তাক্ত মহিলাকে ভর্তি করে পুলিশ, তখন তিনি অচেতন। ডান হাত কনুইয়ের নীচ থেকে ঝুলে রয়েছে। অবিরাম রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

অস্ত্রোপচার করে হাত বাদ দেওয়া ছাড়া আর পথ ছিল না চিকিৎসকদের কাছে। এ দিকে, আহত মহিলার সঙ্গে কোনও পরিজন ছিলেন না। প্রশ্ন উঠছিল, অস্ত্রোপচারের সম্মতিপত্রে কে সই করবেন? মঙ্গলবার সাতসকালে পরিজনেদের খোঁজ করার মতো সময় ছিল না ডাক্তারবাবুদের হাতে।

এই অবস্থায় এগিয়ে আসেন বারাসত সদর হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল নিজেই। অভিভাবক হিসেবে তিনিই সই করেন সম্মতিপত্রে। অস্ত্রোপচারের পরে আপাতত সুস্থ শিউলি অধিকারী নামের বছর আটত্রিশের ওই মহিলা। সব জেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন শিউলির বাড়ির লোক।

Advertisement

বছর কয়েক আগেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসন ও হাসপাতালকে। অজ্ঞাতপরিচয় দুর্ঘটনাগ্রস্তের ক্ষেত্রেও তাঁর প্রাণরক্ষাতেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই নির্দেশ নামেই। এ ক্ষেত্রে সুব্রতবাবুর পদক্ষেপ অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, শিউলির বাড়ি মধ্যমগ্রাম থানার আবদালপুরে। মঙ্গলবারের সকালে ধর্মঘটের জন্য রাস্তা ফাঁকাই ছিল প্রায়। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ শিউলি দাঁত মাজতে মাজতে মধ্যমগ্রাম-বাদু রোডে পৌঁছে যান। রাস্তা পেরনোর সময়ে দ্রুত গতিতে আসা একটি লরির ধাক্কায় পড়ে যান তিনি। লরির পিছনের চাকা তাঁর ডান হাত পিষে পালিয়ে যায়। ওই অবস্থায় প্রায় এক ঘণ্টা পড়েছিলেন তিনি। টহলদারি পুলিশ তাঁকে দেখতে পেয়ে তুলে নিয়ে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শিউলিকে যখন আনা হয়, তত ক্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে গিয়েছে। তা বন্ধ করার জন্য অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক সুপারকে সব জানাতেই হাসপাতালে চলে আসেন তিনি।সুব্রতবাবু জানান, মহিলার যা অবস্থা ছিল, তাতে তাঁকে রেফার করা যেত না। আবার সেই মুহূর্তে অস্ত্রোপচার না করা হলে মৃত্যু হতে পারত রোগীর। অথচ পরিজনেদের তখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সুপার বলেন, ‘‘সেই মুহূর্তে রোগীকে বাঁচানোই প্রথম কর্তব্য বলে মনে হয়েছিল। তাই দ্রুত সম্মতিপত্রে সই করি।’’ দুপুরে পুলিশের মারফত খবর পেয়ে শিউলির মা আলো অধিকারী হাসপাতালে যান। তত ক্ষণে শিউলির অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে। পাঁচ মেয়ের মা আলোদেবী বলেন, ‘‘সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখার জন্য মেয়েটা বিয়ে করেনি। ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালায়। হাতটাই তো বাদ গেল। এ বার কী হবে!’’ পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুদের জন্যই মেয়েকে পেলাম।’’ সুব্রতবাবুর আশ্বাস, নিখরচায় মহিলার নকল হাতের ব্যবস্থা তাঁরা করবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement