পর্যটন নেই গেস্ট হাউসে। নিজস্ব চিত্র
লকডাউন পরিস্থিতিতে একবার খুলেও ফের সংক্রমণের আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের পর্যটনকেন্দ্রগুলি। ফলে স্থানীয় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের পথ চেয়ে বসে আছেন সুন্দরবনের মানুষ। এরই মধ্যে পর্যটন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সুন্দরবনে এলেন দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব। অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনায় সুন্দরবনের হোটেল, গেস্ট হাউসগুলি খোলা থাকলেও পর্যটকের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। ফলে ক্ষতির মুখে সেখানকার মানুষও।
উত্তর ২৪ পরগনার হেমনগর থানার গোবিন্দকাটি গ্রামে বছর কয়েক আগে একটি গেস্ট হাউস গড়ে ওঠে। মূলত পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন জিনিস দিয়েই গেস্ট হাউসটি গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক পার্থ দাস জানান, আমপানের পরে পরিকাঠামো ঠিক করা হলেও গেস্ট হাউস বন্ধ রয়েছে। পার্থ বলেন, “আমরা গ্রামের মানুষকে নিয়ে গ্রামের মধ্যে গেস্ট হাউস চালাই। করোনায় আতঙ্কিত গ্রামবাসী। যদি শহর থেকে অতিথি এলে গ্রামবাসীরা আপত্তি জানান বা অশান্তি হয়, তাই গেস্ট হাউস বন্ধ রাখা হয়েছে।” পার্থ আরও জানান, গত বছর এমন সময়ে সব ঘর বুকিং ছিল। এ বছর গেস্ট হাউস বন্ধ রাখায় সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া, এই গেস্ট হাউসে প্রায় ১৩ জন স্থানীয় কর্মী কাজ করতেন। তাঁদেরও এখন কাজ নেই।
সামসেরনগরের বনবিবি গেস্ট হাউসে গত বছর এমন সময় প্রতিদিন কমপক্ষে চারটে ঘর বুকিং থাকত। এখন সপ্তাহে চারটে ঘর বুকিং হচ্ছে। কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় ৬টি, যোগেশগঞ্জে ৩টি হোম স্টে আছে। বেশিরভাগ জায়গায় পর্যটক নেই। দু’একটিতে পর্যটক এলেও খুব কম। সামসেরনগরে একটি হোম স্টে চালান সুভাষ মৃধা। তিনি বলেন, “এখন পর্যটক আসছেন স্বাভাবিক সময়ের থেকে তিন ভাগের এক ভাগ।”
পর্যটকের আনাগোনা কমে যাওয়ায় এবং পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় মাঝিদেরও মাথায় হাত পড়েছে। কালীতলা খেয়াঘাট থেকে প্রায় ২০টি নৌকো চলত। এক একটি নৌকোয় ৩ জন কর্মী থাকতেন। দিনে প্রায় ৫০০ টাকা করে আয় হত কর্মীদের। এখন তাঁদের আয় বন্ধ।
কালীতলা বাজার, যোগেশগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন দোকানে পর্যটক এলে কেনাবেচা ভালই হত। সেটাও বন্ধ। কালীতলা খেয়াঘাটের পাশে দোকান আছে মিজানুর রহমান গাজি, শঙ্কর মিস্ত্রি, নন্দদুলাল পালদের। তাঁরা বলেন, “এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। বিক্রিও তাই তলানিতে ঠেকেছে।’’
সুন্দরবনের মধুও খুব বিক্রি হত এই সময়ে। এখন মধু বিক্রেতারাও সমস্যায় পড়েছেন। কালীতলা বাজারার মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটক বেশি এলে মাছের বিক্রি ভাল হত। এ বার মাছ ব্যবসাতেও তার প্রভাব পড়েছে।
সুন্দরবন পর্যটন নিয়ে এই ছবি উত্তর, দক্ষিণ দুই জেলাতেই। এই পরিস্থিতিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে সুন্দরবনে ঘুরছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার তিনি আসেন সুন্দরবনে। উঠেছেন সজনেখালিতে। গত দু’দিন সজনেখালি, সুধন্যখালি, ঝড়খালি পর্যটনকেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখেন তিনি। কী ভাবে পর্যটন কেন্দ্রগুলির আরও উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
শনিবার সকালে গোসাবার সাতজেলিয়া পঞ্চায়েতের দয়াপুর গ্রামে যান তিনি। গাড়াল নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রাম সজনেখালি ট্যুরিস্ট স্পটের উল্টো পাড়ে। বছরখানেক আগে দয়াপুরের বাণীপাড়ায় ২২টি বাড়িতে হোম স্টে গড়ে পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ হয়েছিল। এ দিন গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
এ দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন দফতরের আধিকারিকেরা। ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল। অনিমেষ বলেন, “এই এলাকায় যাতে পর্যটনকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সে বিষয়ে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ করা হবে। এলাকার পর্যটনের সম্ভাবনা ও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই মন্ত্রীর এই সফর।”
সুন্দরবনে থমকে থাকা পর্যটন যাতে দ্রুত চালু করা যায়, সে ব্যাপারে সকলেই মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় পর্যটকদের আসা এখানে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মানুষের যে আর্থিক সমস্যা হচ্ছে, সে কথা শুনেছেন মন্ত্রী।’’
গ্রামবাসীরা সুধাংশু রপ্তান, রাজেশ মণ্ডলরা বলেন, “এই এলাকায় পর্যটনকে উন্নত করলে এলাকার মানুষের উপকার হবে। গ্রামে বিকল্প কাজের সংস্থান হলে ভিনরাজ্যে আর যেতে হবে না।”