সুন্দরবনের নদনদীগুলিতে ফের জলস্তর বাড়ার সম্ভাবনা। —নিজস্ব চিত্র।
ইয়াসের ক্ষত এখনও তাজা। তার মধ্যেই ফের জলস্ফীতির জেরে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে সুন্দরবন। ইয়াসের পর বেহাল নদীবাঁধগুলির অধিকাংশ সংস্কার করা হলেও বৃহস্পতিবার পূর্ণিমার কটালে জলস্ফীতির সময় সেগুলি টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে৷
প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার জোয়ারের সময় সাগরের মুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ উপচে বিশালক্ষী মন্দির সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। একই ছবি পাথরপ্রতিমার কুঁয়েমুড়িতে। সেখানে ঠাকুরান নদীর বাঁধ উপচে জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুধবার জোয়ারের সময় নদীতে প্রায় ৩ মিটার জলস্তর বাড়ে। জলস্ফীতির জেরে কাঁচা বাঁধগুলি বেহাল হয়ে পড়ে৷ তবে দু’জায়গাতেই জল নেমে যাওয়ায় জোরকদমে বাঁধের ফাটল মেরামতি শুরু করেছে প্রশাসন ও সেচ দফতর।
বৃহস্পতিবার পূর্ণিমার কটালে সুন্দরবনের নদনদীগুলিতে জলস্তর বাড়ার সম্ভাবনা। ইয়াস-পরবর্তী সময়ে যে সব জায়গায় সাময়িক ভাবে বাঁধ মেরামতি হয়েছিল, কটালের ফলে সে এলাকাগুলিতে জলস্ফীতির প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন৷ এ বারের কটালে সাগরদ্বীপের বোটখালি, সুমতিনগর এবং ঘোড়ামারা দ্বীপে নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। পাথরপ্রতিমার শ্রীধর নগরের বিজয়রঞ্জিতের ঘাটের কাছে জগদ্দল নদীর বাঁধ, বনশ্যামনগরের গঙ্গাপুরের চালতাবুনীয়া নদীর বাঁধ, কুয়েমুড়ির ঠাকুরান নদীর বাঁধ, রাক্ষসখালির কার্জন ক্রিকের বাঁধ এবং জি-প্লটের সীতারামপুরে নদীর বাঁধ উপচেও জল ঢুকতে পারে এলাকায়। রায়দিঘির দমকল, ছাতুয়া মোড়ের কাছে মণি নদীর পাড়, সিংহের ঘেড়ি, কুমড়োপাড়া-খাঁমাথানি এবং হাজরার ঘেড়ি এলাকায় বেহাল হতে পারে বাঁধ। নামখানা, কুলতলি, গোসাবা ব্লকেরও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলি বেহাল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সমন্বয়ে সুন্দরবনে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। আসন্ন কটালে যাতে নতুন করে বিপর্যয় না হয়, সে দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূল এলাকায় মাইকের মাধ্যমে লাগাতার প্রচার শুরু হবে।”
ইয়াস পরবর্তী কটালগুলির মোকাবিলায় কিছু দিন আগেই প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কাকদ্বীপে বৈঠক করেছিলেন সেচ ও সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। তিনি বলেন, “বাঁধ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে কটালের সময় জলস্ফীতির হাত থেকে বাঁধগুলিকে বাঁচানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বৃহস্পতিবার থেকে উপকূল ও সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হবে।”