স্কুলে আসছে সুলতান। ছবি: সুদীপ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
কোমর থেকে পা পর্যন্ত পুরোটাই অকেজো। ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না। লিখতে গেলে হাত কাঁপে ছেলেটির। আশি শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তার ‘রাইটারের’ (লেখক) আবেদন মঞ্জুর হয়নি। শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন নিজেই লিখে পরীক্ষা দিল দেগঙ্গার সুলতান খান।
দেগঙ্গা থানার দেগঙ্গা ১ পঞ্চায়েতের কালিয়ানি গ্রামের বাসিন্দা সুলতান। ইটের দেওয়াল ও পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে বাবা-মা ও তিন ভাই বোনের অভাবের সংসার তাদের। বাবা আখতার খান হৃদরোগী। কার্যত বেকার। মা মাসকুরা খাতুন সংসার সামলান কোনও রকমে। দাদা আফজল খালাসির কাজ করে সামান্য রোজগার করেন। দিদি ফারহা খানম বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। সুলতান জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হলেও পিছিয়ে নেই পড়াশোনায়। কার্তিকপুরের দেগঙ্গা আদর্শ বিদ্যাপীঠ থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। দেগঙ্গার কার্তিকপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যাপীঠে সিট পড়েছে।
শুক্রবার প্রথম দিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। এ দিন হুইল চেয়ারে বসে মা ও দিদির সঙ্গে পরীক্ষা দিতে আসে সুলতান। সে বলে, ‘‘লিখতে গেলে হাত কাঁপে। পরীক্ষায় লেখার জন্য রাইটারের আবেদন করেছিলাম। তা নাকচ হওয়ায় নিজেকেই লিখতে হয়েছে। পরীক্ষা ভাল হলেও লিখতে বেশ কষ্ট হয়েছে।’’ মাসকুরা বলেন, ‘‘ছেলেটা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। ছোটবেলায় কোলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতাম। আজ লিখতে খুব কষ্ট হয়েছে। রাইটার পেলে আরও ভাল পরীক্ষা দিতে পারত। বাকি পরীক্ষার জন্য ফের রাইটার চেয়ে আবেদন করেছি।’’
এ বিষয়ে কার্তিকপুর দেগঙ্গা আদর্শ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রণব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার স্কুল থেকে দু’জন প্রতিবন্ধী পড়ুয়া পরীক্ষা দিচ্ছে। এক জন কথা বলতে পারে না, কানে শোনে না। অন্য জনের কোমর থেকে পা পর্যন্ত অকেজো। দু’জনেই রাইটার চেয়ে আবেদন করেছিল। বোর্ড এক জনের আবেদন মঞ্জুর করেছে। সুলতানের জন্য অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট বরাদ্দ করেছে। কিন্তু রাইটার দেয়নি। এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।’’