প্রচার: কর্মীদের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদার। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।
উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে। সোমবার পুরভোটের প্রচারে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এসেছিলেন সুকান্ত। সেখানে তিনি উস্কানিমূলক কথা বলেছেন বলে অভিযোগ। ওয়ার্ডের বাসিন্দা জনৈক সমীর দাস হাবড়া থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুকান্তের ওই কথাবার্তা সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে (আনন্দবাজার পত্রিকা তার সত্যতা যাচাই করেনি)। সেখানে শোনা যাচ্ছে, দলীয় নেতা-কর্মীদের সুকান্ত বলছেন, ‘‘আমার বক্তব্য, মার খেয়ে, কেস খেয়ে জেলে যাওয়ার মানে হয় না। হাত গরম করে জেলে যাব। পার্টি আপনাকে জামিনের ব্যবস্থা করবে।’’
বৃহস্পতিবার সুকান্ত হাবড়ায় পুরভোটের প্রচারে এসেছিলেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আত্মরক্ষার অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকার। পড়ে পড়ে কি আমরা মার খেয়ে মরে যাব? আমরা আমাদের শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করব।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘তৃণমূল অভিযোগ করা ছাড়া আর মামলা করা ছাড়া বিজেপি বা জনগণকে কিছুই দিতে পারে না।’’
তৃণমূলকে কটাক্ষ করে সুকান্ত এদিন আরও বলেন, ‘‘বর্তমান রাজ্যে যে প্রশাসন (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) আছে, সেখানে কেউ নিরাপদ (সেফ) নয়। তৃণমূলে তৃণমূলে গোলমাল শুরু হবে। রাজ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। তৃণমূল তৃণমূলকে মারবে।’’ সুকান্তর হুঁশিয়ারি, ‘‘রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন তৃণমূলের শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর কথায়, ‘‘উনি বেবিফুড ছেলে। রাজনৈতিক পরিপক্বতা আসেনি। হঠাৎ করে জায়গা পেয়ে গিয়েছেন। হাবড়ার মানুষ শিক্ষিত। তাঁরা এ সব কথা মেনে নেবেন না।’’
এ দিন হাবড়ায় সুকান্ত যে কর্মসূচিতে যোগদান করেন, তার নাম দেওয়া হয় ‘পাড়ায় সুকান্ত।’ বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। হাবড়ার বিদায়ী পুরপ্রশাসক নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘আমরা দিদিকে বলো কর্মসূচি করে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মানুষকে পরিষেবা দিয়েছি। পুরসভার পক্ষ থেকে পাড়ায় পুরসভা করেছি। ভোটের আগে সুকান্তবাবু পাড়ায় এসে মানুষকে কী পরিষেবা দেবেন? দিদির কনসেপ্ট চুরি করে শেখার চেষ্টা করছেন।’’ সুকান্ত হাবড়া থেকে গোবরডাঙা যান পুরভোটের প্রচারে। সেখানে কালী মন্দিরে পুজো দেন। গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে সরব হন। শেষে বনগাঁয় আসেন। দলের মধ্যে কোন্দল প্রসঙ্গে বনগাঁয় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ভারতের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিজেপি। সকলেই পদ পেতে চান। তবে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও, মনের পার্থক্য নেই।’’
বনগাঁর সভায় সুকান্ত বলেন, ‘‘গরু-কয়লা পাচারের টাকা যাঁরা খেয়েছেন, সিবিআই তাঁদের আদর খেতে ডাকবেই। কেউ ছাড় পাবেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ক্ষ্যাপা ষাঁড়’ বলেও এদিন কটাক্ষ করেন সুকান্ত।
বনগাঁয় সুকান্তের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বিজেপি বনগাঁর সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি মনস্পতি দেবকে। এ বিষয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘ওঁকে মেসেজ পাঠানো হয়েছিল। জেলা সভাপতি ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। ফোনে পাওয়া যায়নি। জেলার পর্যবেক্ষককে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ মনস্পতির দাবি, রাজ্য সভাপতির কর্মসূচি নিয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।