লাইসেন্স ছাড়াই চলছে কাকদ্বীপের বেশিরভাগ পলিক্লিনিক। এ বার সেগুলিকেও নিয়মের মধ্যে আওতায় বাঁধতে চায় সরকার। লাইসেন্স না নিলে সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি একজন ডাক্তার এক সঙ্গে কতগুলি ল্যাবের সঙ্গে যুক্ত, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন আইনের পরে তা-ও দেখতে তৎপর হয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
কাকদ্বীপের পলি ক্লিনিকগুলিতে একাধিক ডাক্তার বসেন। অথচ ক্লিনিকগুলির বেশির ভাগেরই স্বাস্থ্য দফতরের লাইসেন্স নেই বলে দফতর সূত্রের খবর। দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কোনও ছাড়পত্রও নেই। কাকদ্বীপে মোট ৮টি এ রকম পলিক্লিনিকের ৬টিতেই কোনও রকমের কাগজপত্র নেই। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন বিলে এগুলিকে আরও বিধি-নিষেধের জালে জড়ানোর বিধান রয়েছে।
জানা গিয়েছে, দূষণের শংসাপত্র ছাড়া এই ক্লিনিকগুলি ইচ্ছেমতো তুলো, গজ, ইঞ্জেকশনের ব্যবহার করা সিরিঞ্জ ছড়িয়ে রাখছে। কালনাগিনী খালের আশেপাশেই রয়েছে বেশিরভাগ ক্লিনিকগুলি। অনেক জায়গাতেই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বর্জ্য ফেলা বা নষ্ট করা হচ্ছে না। উল্টে খালের জলের সঙ্গে নানা রকমের বর্জ্য মিশছে। ক্লিনিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। রোগীর ভিড় হলে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় সকলের। ছোট ছোট ঘরে ঘুপচি তৈরি করে প্লাইউডের পার্টিশন দেওয়া হয়েছে। অথচ তাতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।
কাকদ্বীপের পলিক্লিনিকগুলি ঘুরে নানা অনিয়মের ছবি নজরে এল। একটি ক্লিনিকের মালিকের কথায়, ‘‘জানি সবই। দিন কুড়ি হল আবেদন করে রেখেছি লাইসেন্সের জন্য।’’ হাসপাতালের কাছে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রয়েছে আরও কয়েকটি পলিক্লিনিক। সেগুলিরও লাইসেন্স নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম মালাকার জানিয়েছেন, শীঘ্রই এই ধরনের পলিক্লিনিকগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তাঁর কথায়, ‘‘পুরনো আইনেই এগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জায়গা রয়েছে। সেগুলিই দেখা হবে, যে কাগজপত্র ঠিকঠাক রয়েছে কিনা। না থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলি করে নিতে হবে।’’ জানা গিয়েছে, আগামী সপ্তাহে মাত্র পাঁচ দিন সময় দেওয়া হবে নথিপত্র ঠিকঠাক করে নেওয়ার জন্য।
জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, একজন ডাক্তার বিভিন্ন ল্যাবের সঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারেন। কিন্তু কোথায়ট কোন লময় তিনি কাজ করছেন, সে সব বিস্তারিত দেখা হবে।
নিয়মমাফিক একজন ডাক্তারের উপস্থিত থেকে ল্যাব টেকনিশিয়ানকে পরামর্শ দিয়ে বিভিন্ন রোগনির্ণয়ের পরীক্ষা করানো উচিত। কিন্তু তা না করে কেবল সই করে দিয়েই টাকা নিচ্ছেন ডাক্তারেরা, এ রকম অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
তাঁদের দাবি, একজন জেলার তিন জায়গায় ল্যাবের পরীক্ষার রিপোর্টে সই করছেন। অথচ বাস্তবে একই দিনে তাঁর পক্ষে ওই তিন জায়গায় উপস্থিত থেকে তা করা সম্ভব নয়। এ রকম অবাস্তব গতিবিধি বন্ধ করা হবে। কারণ, তা না হলে অনেক সময়েই রোগনির্ণয়ে ভুল রিপোর্ট হয়।