দেওয়াল অলঙ্কার হয়ে ঝুলছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার আমরি, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ, ভুবনেশ্বরের হাসপাতাল— অগ্নিকাণ্ডে রোগীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে রাজ্য এবং রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের অন্য প্রান্তেও। কোনও বড় ঘটনা ঘটলে কিছু দিন নড়েচড়ে বসে বাকিরা। কোথাও হয় তো কিছু সরঞ্জামও কেনা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই সরঞ্জাম ব্যবহারের ঠিকঠাক তালিম হাসপাতাল কর্মীদের আছে কিনা, প্রশ্নটা থেকেই যায়। আগুন লাগলে মোকাবিলার জন্য অন্য যা যা কিছু পরিকাঠামো দরকার হাসপাতালে, সেটা কতটা আছে, তা নিয়েও সংশয় থেকে যায়। নজরদারির ঢিলেঢালা দিকটা নজর এড়ায় না।
কিন্তু অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকলে এবং সে সব সরঞ্জাম ব্যবহারের তালিম থাকলে বড়সড় বিপত্তি যে এড়ানো যায়, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। ক’দিন আগেই আগুন লেগেছিল সেখানে। হাসপাতালের এক কর্মীর অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ ছিল। যন্ত্রপাতিও মজুত ছিল। ওই কর্মী কার্যত একা হাতেই দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেন।
কিন্তু ঘটনা হল, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমস্ত হাসপাতালে এখনও এমন উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি।
ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং ১ ও ২, বাসন্তী, গোসাবা ব্লক হাসপাতাল কিংবা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের কথাই ধরা যাক। এখনও ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। যদিও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র লাগানো রয়েছে। কিন্তু কী ভাবে তার ব্যবহার সম্ভব, কত দিন পর্যন্ত ওই সিলিন্ডারের মেয়াদ— সে সব তথ্য নেই যন্ত্রের পাশে।
জানা গেল, হঠাৎ আগুন লাগলে ওই যন্ত্র ব্যবহার করে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, সেই বিষয়ে সঠিক প্রশিক্ষণও নেই হাসপাতালের কর্মীদের। শুধু তাই নয়, দমকল দফতরের আইন অনুযায়ী, বালি-ভর্তি বালতি, বিপদ ঘণ্টা— এ সবও নেই হাসপাতালে। নিয়ম হল, হঠাৎ আগুন লাগলে বিপদ ঘণ্টা সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠার কথা। আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র লাগানো ছাড়া আর কোনও নিয়মের বালাই নেই।
হাসপাতালের কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছু দিন আগে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র লাগানো হলে তাঁরাই প্রশ্নটা তুলেছিলেন, এই যন্ত্র ব্যবহার হবে কী ভাবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে সব নিয়ে গা করেননি। ফলে কার্যত দেওয়ালের গায়ে অলঙ্কার হয়ে ঝুলছে অগ্নি নির্বাপণ সিলিন্ডারগুলি।
হাসপাতালের সুপার অর্ঘ্য চৌধুরী বলেন, ‘‘হাসপাতালের অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা আরও কী ভাবে বাড়ানো যায়, তার একটা নির্দেশিকা দিয়ে গিয়েছে দমকল দফতর।’’ কিন্তু কবে এবং কী ভাবে সেই নির্দেশিকা কাজে লাগানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
জেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার দাস বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করছি। ক্যানিং হাসপাতাল থেকেও একটা পাঠানো প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। কী ভাবে তা দ্রুত কার্যকর করা যায়, তা দেখছি।’’