জে পি নড্ডা। ফাইল চিত্র।
ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শিরাকোল সহ ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় বিজেপি নেতা জে পি নড্ডার কনভয় ঘিরে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে রিপোর্ট দিয়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর। তারপরেও হামলার ঘটনা কী ভাবে ঘটল, সে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ সুপার সমালোচনার কেন্দ্রে। তিনি সময় মতো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ। এমনকী, তাঁকে গোলমাল চলাকালীন কেউ এলাকায় দেখেনি বলে অভিযোগ বিরোধী শিবিরের। স্থানীয় মানুষজনের কথাতেও মিলেছে তার সমর্থন।
শিরাকোলে যখন বিজেপি নেতা জে পি নড্ডার গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটছে, তখন এলাকায় ছিল তিনটি থানার পুলিশ। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ গোলমাল থামানোর সে ভাবে চেষ্টাই করেনি। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের সামনেই হামলা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলেও পুলিশকে লাঠি চালাতে দেখা যায়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশকর্মী কমবেশি আহত হন বলে দাবি পুলিশের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা বিজেপি নেতৃত্বের কনভয় এগিয়ে নিয়ে যান কোনওমতে।
বিজেপির ঘোষিত কর্মসূচি হিসাবে ওই এলাকায় কখন পৌছবে নড্ডার কনভয়, সে খবর ছিল পুলিশের কাছে। তৃণমূল রাতারাতি যে সমাবেশের আয়োজন করছে, সে খবরও অজানা হওয়ার কথা নয় পুলিশ কর্তাদের। বিজেপি নেতাদের আসার পথে বহু জায়গায় গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে উত্তেজনা ছিলই। শিরাকোলে গোলমাল বড় আকার নিলে পুলিশ সুপারকে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল না, কেন সে প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি জেলা নেতারাও।
শিরাকোল-কাণ্ডের পরে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার-সহ রাজ্য পুলিশের দুই উচ্চপদস্থ কর্তাকে তলব করেছে কেন্দ্র। এ দিন পুলিশ সুপারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেরও উত্তর দেননি। ঘটনার পরেও তাঁকে রবিবার পর্যন্ত এলাকায় দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষজনই।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোলমালের সময়ে পুলিশ সুপার নিজের অফিসে বসে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন। সেই অফিস কয়েক কিলোমিটার দূরে, এ কথা জানিয়ে পুলিশ সুপারের ভূমিকার সমালোচনা করছেন বিজেপি নেতারা। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আগে একজনই পুলিশ সুপার ছিলেন। পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ জেলা ভেঙে ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর ও সুন্দরবন— এই তিনটি পুলিশ জেলা করা হয়। ২০১৭ সালে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা হওয়ার পরে দ্বিতীয় বার পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন ২০১১ সালে পাশ করা আইপিএস ভোলানাথ। তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। কিছু দিন আগে বিজেপির রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য ডায়মন্ড হারবারে সভা করতে আসার পথে ডায়মন্ড হারবারের সরিষা স্রোতের পোলের কাছে তাঁর গাড়ি আটকে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। মারধরের অভিযোগ ওঠে ওই নেতা-সহ কয়েকজনকে। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ বিজেপির।
মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘গন্ডগোলের সময় পুলিশ যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছিল। ঝামেলা থামাতে রীতিমতো লাঠিও চালায়। তাতে আমাদের ৮-৯ জন কর্মী জখম হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে লাগাতার তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থককেও।’’ বিজেপি জেলা সহ-সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন, ‘‘গন্ডগোল চলাকালীন পুলিশ কোনও ভূমিকা পালন করেনি। উল্টে ওদেরকেই সমর্থন করেছে।’’