—নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ দিন ধরেই বাদাবন আর তার বাসিন্দা বন্যপ্রাণীদের রক্ষায় নজরদারি বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছিল বন দফতর। বুধবার সেই উদ্দেশ্যে হল অভিনব এক পদক্ষেপ। ঝড়খালিতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা ‘ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (ডব্লিউটিআই)-র পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের মাতলা, রায়দিঘি ও রামগঙ্গা রেঞ্জের বনকর্মীদের নিয়ে একটি আধুনিক ড্রোনের পরিচালনার প্রশিক্ষণের আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হল প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি বাড়ানোর কাজ।
এই ড্রোনটি গত ২৯ জুলাই বাঘ দিবসের দিন ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণা বনবিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) মিলন মণ্ডলের হাতে একটি তুলে দেওয়া হয়েছিল। মূলত এই ড্রোনটি গ্রামে ঢোকা বাঘ-সহ অন্যান্য কোনও বন্যপ্রাণী প্রবেশ করলে আকাশপথে নজরদারি করতে সাহায্য করবে। চোরাশিকারি এবং বন ঢুকে বেআইনি কাঠ সংগ্রহকারীদের উপরেও নজর রাখা সম্ভব হবে এর সাহায্যে।
ঝড়খালির কর্মশালায় মূল প্রশিক্ষক ছিলেন ওড়িশা বিভাগের প্রধান রুদ্রকুমার মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘আধুনিক এই ড্রোনটি বন্যপ্রাণী গ্রামে প্রবেশ করলে আকাশপথে নজরদারির করতে সাহায্য করবে যার ফলে মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্ব প্রশমন-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বনকর্মীদের পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। আমরা বিগত আট বছর ধরে ওড়িশার সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান ও কেওনঝড়ে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব প্রশমন ও হাতির দলকে পর্যবেক্ষণ করতে ড্রোন ব্যবহার করছি।
ডব্লিউটিআই-এর সুন্দরবন প্রকল্পের প্রধান প্রসেনজিৎ শীল বলেন, ‘‘এই আধুনিক ড্রোনটি গ্রামে বাঘ প্রবেশ করলে বনদপ্তরকে আরও ভালো ভাবে আকাশপথে নজরদারির মাধ্যমে বাঘের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করবে। বনকর্মীদের পায়ে হেঁটে বাঘের অবস্থান নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা কমবে ফলে তাদের জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে। এ ছাড়া আধুনিক হওয়ার এই ড্রোনটি মাটি থেকে অনেক কম উচ্চতা দিয়েও উড়তে সক্ষম, যার ফলে বাঘ-সহ অন্য বন্যপ্রাণীর অবস্থান নির্ণয় করে খুব দ্রুত সুষ্ঠ পরিকল্পনা তৈরীতে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে এই ড্রোনের সাহায্যে জঙ্গলে বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদেরও চিহ্নিত করা যাবে।
বিভাগীর বনাধিকারিক মিলন মণ্ডলের কথায়, ‘‘ডব্লিউটিআই বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের রায়দিঘি রেঞ্জের কুলতলি ব্লকের অন্তর্গত দেউলবাড়ি, গুড়গুড়িয়া ও মৈপীঠ অঞ্চলের মানুষের জঙ্গল নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এ ছাড়া বন্যপ্রাণ উদ্ধার, স্থানীয়দের মধ্যে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করছে।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ভারতীয় সুন্দরবনে জঙ্গল-লাগোয়া ব্লকগুলিতে ডব্লিউটিআই-এর পক্ষ থেকে মানুষ-বাঘ সঙ্ঘাতের ওপর একটি সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে সুন্দরবন ব্যাঘ্রপ্রকল্প লাগোয়ে গোসাবা ব্লক প্রথম স্থানে রয়েছে। ঠিক এর পরেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের বাদাবন সন্নিহিত কুলতলি ব্লক।