মঙ্গলবার সকালে এক বিস্ফোরণের ঘটনায় ছ’জন জখম হয়েছেন কামারহাটি ও পানিহাটি পুরসভা এলাকার সংযোগস্থলে। প্রতীকী ছবি।
আচমকা বিকট শব্দ। চার দিক ঢেকে গেল ধোঁয়ায়। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন পথচারীরা। ধোঁয়া একটু সরতেই সকলে দেখলেন, রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন এক মহিলা-সহ কয়েক জন। আহতদের মধ্যে রয়েছে এক স্কুলপড়ুয়াও। প্রায় সকলেই রক্তাক্ত। মঙ্গলবার সকালে এমনই এক বিস্ফোরণের ঘটনায় ছ’জন জখম হয়েছেন কামারহাটি ও পানিহাটি পুরসভা এলাকার সংযোগস্থলে।
প্রথমে ভাবা হয়েছিল, রাস্তার ধারে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার দোকানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিন্তু পরে দমকল ও পুলিশ এসে তদন্ত করে দেখে, বোমা ফেটেই এমন ঘটনা ঘটেছে। কারণ, জখমদের মধ্যেই এক জনের হাতে বোমা ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত এক মহিলা। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর ও দক্ষিণ) অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় কয়েক জন আহত হয়েছেন। এক জন গুরুতর জখম হয়ে আর জি করে চিকিৎসাধীন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা হবে। ঠিক কী কারণে ওই বিস্ফোরণ, তা জানতে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও খবর দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পানিহাটি পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত হলেও তা এলাকাবাসীর কাছে কামারহাটির এনআরএ রোড বলেই পরিচিত। সেখানেই রাস্তার ধারে রয়েছে অটোয় গ্যাস ভরার একটি অবৈধ দোকান। এ দিনের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, বেআইনি ওই গ্যাসের দোকান এলাকায় চলছে কী ভাবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশকর্তারা। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ওই দোকানের সামনেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। চার দিক ধোঁয়ায় ভরে যায়। তার পরেই মহিলা, পুরুষ ও এক কিশোর-সহ ছ’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই আহতদের তড়িঘড়ি উদ্ধার করে কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যান। মহম্মদ নাদিম সারোয়ার নামে এক যুবক গুরুতর জখম হওয়ায় তাঁকে সাগর দত্ত থেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল এবং খড়দহ ও কামারহাটিথানার পুলিশ।
এ দিন ঘটনাস্থলে যান ডিসি অজয় প্রসাদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রিয়ব্রত বক্সী-সহ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা। পুলিশ ও দমকল প্রাথমিক তদন্তের পরে জানায়, সিলিন্ডার ফাটেনি। কারণ, তা ঘটলে ওই দোকানে বা রাস্তায় তার প্রমাণ মিলত। দোকানে থাকা অন্য সিলিন্ডারগুলিও অক্ষত থাকত না। ঘটনায় জখম মেহেরুন্নিসা নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবেমাত্র বাড়ির গেট খুলে বেরিয়েছি। দেখি, এক যুবকের হাতে কালো রঙের একটি ব্যাগ। অন্য এক জন সেটি টানাটানি করছেন। তখনই ওই যুবক পড়ে গেলে ব্যাগে রাখা বোমা ফেটে যায়।’’ স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আরিফ বলল, ‘‘আচমকা বিকট শব্দ। মাথায় কিছু একটা এসে লাগতেই জ্ঞান হারাই।’’ মেহেরুন্নিসা ও আরিফকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ জেনেছে, বিস্ফোরণে গুরুতর জখম মহম্মদ নাদিম সারোয়ারের হাতেই ছিল ওই কালো ব্যাগ। তাতেই বোমা ভরে এনেছিলেন তিনি। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় ব্যাগে থাকা বোমা ফেটে যায়। কিন্তু কেন ওই যুবক ব্যাগে বোমা নিয়ে ঘুরছিলেন, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।