গোবরডাঙা জমিদার বাড়ির ঠাকুরদালানে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
এলাকায় বেড়েছে থিম পুজোর সংখ্যা। মানুষ এখন রাত জেগে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখতে অভ্যস্ত। তা সত্ত্বেও গোবরডাঙার প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুজোর গুরুত্ব এলাকার মানুষের কাছে কমেনি। তিনশো বছর পেরিয়েছে পুজোর বয়স। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই পুজোকে গোবরডাঙা জমিদার বাড়ির পুজো হিসেবে জানেন। করোনা ও লকডাউনের কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে মূর্তি পুজো হয়নি। এই দু’বছর ঘট পুজো হয়েছিল। গত বছর থেকে আবার মূর্তি পুজো হচ্ছে। এ বছর সম্পূর্ণ করোনামুক্ত পরিবেশে পুজো হচ্ছে ধুমধাম করে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে চারশো বছরেও বেশি আগে প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা লখনৌ থেকে অধুনা বাংলাদেশের সারষা এলাকার সাগরদাঁড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন। পুজো শুরু হয়। পরে পরিবারের এক সদস্য শ্যামরাম গাইঘাটার ইছাপুরে চৌধুরী জমিদার পরিবারের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে তিনি জমিদারির একাংশ পান। তাঁর ছেলে খেলারাম ব্রিটিশের কালেক্টর ছিলেন। তিনিই গোবরডাঙার বাড়িতে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন। পাশাপাশি এলাকায় প্রসন্নময়ী দক্ষিণাকালী মন্দির ও দ্বাদশ শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কথিত আছে, রানি রাসমণি ওই কালী মন্দিরে এসেছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মাষ্টমীর দিন বাবলা কাঠ দিয়ে কাঠামো পুজো শুরু হয়। প্রতিপদে কালীমন্দিরে ঘট স্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন ওই ঘট ও কলা বৌ পুজো মণ্ডপে আনা হয়। এখানে দেবী ‘প্রসন্নময়ী দুর্গা’ নামে খ্যাত।
আগে পুজোয় ১৪টি পাঁঠা, ২টি ভেড়া, আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়া হত। মুখোপাধ্যায় পরিবারের অষ্টম পুরুষ নয়নপ্রসন্ন বলেন, “১৯৯৭ সাল থেকে বলি প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যেরা বলি পছন্দ করেন না। তার বদলে শাস্ত্রীয় মতে মধু ও চিনি বলি দেওয়া হয়।” আগে ষষ্ঠীতে জমিদার বাড়িতে কামান দাগা হত। এলাকার মানুষ বুঝতে পারতেন, পুজো শুরু হল। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাতি থাকত।