এ ভাবেই হাতে রিভলভার নিয়ে বিয়ের শোভাযাত্রা চলেছে যশোর রোডে। বৃহস্পতিবার।
খোদ উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সদর দোলতলার কাছে পুরনো যশোর রোড ধরে চলছে বিয়ের শোভাযাত্রা। বর চলেছেন আগে, পিছনে বরযাত্রী। রয়েছেন কনেপক্ষেরও কয়েক জন। রাস্তার উপরে ফাটানো হচ্ছে আতসবাজি, শব্দবাজি। শুধু তাই নয়, একে অপরকে টেক্কা দিতে দু’পক্ষই শূন্যে গুলি চালাচ্ছে রিভলভার থেকে। এমন সময় কনেপক্ষের এক আত্মীয়ের রিভলভার থেকে ছোড়া একটি গুলি ছিটকে লাগল বরের দাদার পিঠে। রাস্তার উপরেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন বরের দাদা সোনু সিংহ নামে ৩৫ বছরের ওই যুবক। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ মধ্যমগ্রামের রাস্তায় প্রকাশ্যে এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে যান এলাকার মানুষ।
সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য সোনুকে যশোর রোড সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই অস্ত্রোপচার করে তাঁর শরীর থেকে গুলি বার করেন চিকিৎসকেরা। ঘটনায় সোনু প্রাণে বাঁচলেও কন্যাপক্ষের দুই আত্মীয় রাজু সিংহ এবং রবি সিংহকে গ্রেফতার করেছে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিভলভারটির মালিক রবি। তবে বৃহস্পতিবারের ওই শোভাযাত্রায় রিভলভার থেকে গুলিটি চালায় রাজু।
ওই রিভলভারটির কোনও লাইসেন্স ছিল না বলেও জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার ধৃত দু’জনকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘রিভলভারটি কী ভাবে ধৃতেরা পেল এবং কেন প্রকাশ্যে গুলি চালানো হচ্ছিল সব কিছুরই তদন্ত চলছে।’’
উত্তরপ্রদেশ, বিহারের কিছু এলাকায় বিয়েতে এমন ভাবে গুলি চালানোর প্রথা রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার টিটাগড়ের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে মধ্যমগ্রামের বঙ্কিম পল্লির এক তরুণীর বিয়ে ছিল। দোলতলার কাছে একটি বিয়েবাড়িতে বসেছিল অনুষ্ঠানের আসর। সেখানে বর নিয়ে ঢোকার সময় শোভাযাত্রাতেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তাতেই টিটাগড়ের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী সোনু জখম হন।
তবে এই ঘটনায় আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মাস কয়েক আগে মধ্যমগ্রামের বঙ্কিম পল্লিতেই দিনের বেলা প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে খুন করা হয় প্রকাশ দে সরকার ওরফে ঢাকাই গৌতম নামে এক ব্যক্তিকে। পুলিশের দাবি, জেরায় রবি জানিয়েছেন, তাঁকে রিভলভারটি রাখতে দিয়েছিলেন ঢাকাই গৌতমই। এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই ঘটনায় মধ্যমগ্রামে দুষ্কৃতীরাজ, প্রকাশ্যে গুলি চালানো এবং সমাজ বিরোধী কাজকর্ম যে বন্ধ হয়নি ফের তারই প্রমাণ মিলল।