তৃষ্ণা: হিঙ্গলগঞ্জ বাঁশতলি গ্রামে পানীয় জল নেওয়ার লাইন। নিজস্ব চিত্র।
তেষ্টা মিটবে কিনা তা নির্ভর করে নদী থেকে বাড়ির দূরত্ব কত, তার উপরে। নদীর কাছে ঘর হলে পানীয় জল মেলার সম্ভাবনা বেশি। আর বাড়ি দূরে হলে জল মিলবে কম। এটাই ছবি ইয়াস-বিধ্বস্ত বসিরহাট মহকুমার নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার।
রায়মঙ্গলের তীরে সন্দেশখালির আতাপুর আর মণিপুর গ্রাম। যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও পান করার উপযুক্ত নয়। পানীয় জল সংগ্রহের জন্য গ্রামবাসীকে যেতে হয় নদীর পাড়ে। সেখানে আসে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের পাঠানো পানীয় জলের ট্যাঙ্ক। আসে জলের পাউচ আর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের পাঠানো জলের বোতল।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে মেলে এক ঘড়া বা এক বালতি জল। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, যাঁদের বাড়ি নদীর কাছে, তাঁরা বেশি জল পান। কারণ, তাঁরা দ্রুত পৌঁছতে পারেন নদীর পাড়ে। যাঁদের বাড়ি নদীর পাড় থেকে বেশ কিছুটা দূরে, তাঁদের কপালে জোটে আধ বালতি তা তারও কম পানীয় জল।
ইয়াসের দিন গৌড়েশ্বরের জলে ভেসেছিল মামুদপুর। বিদ্যাধরীর নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছিল বাঁশতলি। নোনা জলে ডুবেছিল পানীয় জলের কল। এখনও সেই সব গ্রামের কলগুলি থেকে নোনা জল ওঠে। গ্রামবাসীকে পানীয় জলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নদীর পাড়ে। সেখানেও জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জলের ট্যাঙ্ক পাঠায়। সেই জল ভাগ করে নেন গ্রামবাসী।
কাকভোর থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়। অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইয়াসের পরে এটাই চিত্র হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ এবং সন্দেশখালি (১ ও ২) ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার। সরকারি এবং বেসরকারি ত্রাণ এলেও মিলছে না পর্যাপ্ত পানীয় জল। এমনটাই অভিযোগ ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের।
বেশির ভাগ প্লাবিত গ্রাম থেকে জল নামলেও নিচু অনেক এলাকায় এখনও নোনা জল জমে রয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে জলকষ্ট তীব্র হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। মিনাখাঁর উচিলদহ, সন্দেশখালির আতাপুর, মণিপুর, বাউনিয়া, হাসনাবাদ, কালিনগর, হিঙ্গলগঞ্জের বাঁশতলি, দুলদুলি, রূপমারি ও সামশেরনগরের বাসিন্দাদের দাবি, জলকষ্ট এখন তাঁদের নিত্যসঙ্গী। তবে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবি, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জের মানুষের জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুধবার বাঁশতলি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জলের ট্যাঙ্কের সামনে সারি দিয়ে রাখা আছে বালতি, কলসি ও হাঁড়ি। জলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেবযানী মণ্ডল, শিখা করণ, স্বপ্না দাস ও কমলিকা সর্দারের মতো অনেকেই। তাঁদের কথায়,‘‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদীর বাঁধ ভেঙে নোনা জলে ডুবে গিয়েছিল পানীয় জলের সব কূপ। সেই সমস্ত কলের জল খাওয়া যাচ্ছিল না। প্রশাসনকে জানানোর পরে পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে ঠিকই, তবে তা পর্যাপ্ত নয়।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘যাঁদের বাড়ি নদীর পাড় থেকে দূরে, তাঁরা ভোরে উঠে কাপড়ের কোঁচড়ে মুড়ি নিয়ে লাইনে দাঁড়ান। তাতেও মেলে মোটে আধ বালতি জল। লাইনের শেষের দিকে যাঁরা থাকেন, তাঁরা অধিকাংশ দিন জল পান না।’’
হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক দেবেশ মন্ডল বলেন, ‘‘শুনেছি কিছু এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা আছে। প্রত্যেকটি পঞ্চায়েতের প্রধানকে বলে দিয়েছি, দুয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।’’
মহকুমাশাসক (বসিরহাট) মৌসম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে কয়েক হাজার জলের পাউচ পাঠানো হয়েছে। ট্যাঙ্কে করেও প্লাবিত এলাকায় জল পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও পাঠানো হবে। তা সত্ত্বেও কোনও গ্রামে পানীয় জল পর্যাপ্ত না গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’