অব্যবস্থা: পঞ্চম-সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ক্লাস করছে এক সঙ্গে একই ঘরে। দেগঙ্গার একটি জুনিয়র হাইস্কুলে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে। শিক্ষকও কম। ফলে একাধিক শ্রেণির পড়ুয়াদের এক সঙ্গে একই ঘরে বসিয়ে চলে পঠন-পাঠন।
এমনই পরিস্থিতি উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জুনিয়র হাই স্কুলের। এই সব স্কুল থেকে আদৌ কোনও লাভ হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সম্প্রতি দত্তপুকুর থানার কাঠুরিয়া জুনিয়র হাইস্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চম-সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির জনা দশেক পড়ুয়া এক সঙ্গে এক ঘরে বসে ক্লাস করছে। একই অবস্থা দেগঙ্গা থানার রামনাথপুর জুনিয়র হাইস্কুলেও। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলছে তিনটি শ্রেণির। তিনটি বেঞ্চে ভাগাভাগি করে বসে আছে পঞ্চম, ষষ্ট ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা।
একাধিক স্কুল সূত্রের খবর, প্রতিটি ক্লাসের জন্য পৃথক শ্রেণিকক্ষ এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষকও নেই। পরিকাঠামোগত নানা সমস্যাও রয়েছে। ফলে দিনে দিনে কমেছে পড়ুয়া সংখ্যা। সম্প্রতি প্রশাসন একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনায় ৫৪০টি স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ৩০ জনের কম। এর মধ্যে জুনিয়র হাই স্কুল রয়েছে বেশ কয়েকটি।
কাঠুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাঞ্জন দেবনাথ বলেন, “২০১২ সালে স্কুল চালু হয় একটি ঘরে। পরে আর একটি ঘর তৈরি করা হয়। দু’টি ঘরে চার ক্লাসের পঠনপাঠন করাতে হয়। ফলে পড়ুয়াদের এক সঙ্গেই বসাতে হয়। শিক্ষকদের বসার কোনও ঘর নেই। পরিকাঠামো না থাকায় পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে। স্কুল শিক্ষা দফতরকে স্কুলের তথ্য বহু বার জানিয়েছি। দফতর সবই জানে। পড়ুয়াদের ভর্তি করাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি আমরা।”
শিক্ষকদের অনেকের মতে, পরিকল্পনার অভাবেই পিছিয়ে পড়ছে জুনিয়র হাই স্কুলগুলি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হয় এই সব স্কুলে। তারপরে স্কুল বদলে অন্য স্কুলে যেতে হয়। ফলে অভিভাবকেরা জুনিয়র হাই স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে চান না। তাঁরা একেবারে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের কথায়, “অনেক স্কুলেই ১০০ জন পড়ুয়া নেই। পঠনপাঠনও বেহাল। সরকারের উচিত এই স্কুলগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁদের অনেকের মতে, পরিস্থিতি উপরমহলের অজানা নয়। সকলেই সব জানেন। নিশ্চয়ই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।