হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রোগীর আত্মীয়েরা। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।
সন্তানের জন্ম দিয়ে এক প্রসূতির মৃত্যু। পর দিনই আর এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু।
শনি-রবি— পর পর দু’দিনে এমন দুই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিষেবা ও পরিকাঠামো। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি নিয়মে বিভাগীয় তদন্ত হবে।’’
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর এলাকার বাসিন্দা লতা মজুমদার দাস (২৬)। ওই দিন বিকেলে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। মা ও সন্তান সুস্থই ছিল বলে দাবি পরিবারের।
পরিজনেদের অভিযোগ, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে খবর দেওয়া হয়, লতার মৃত্যু হয়েছে। লতার স্বামী শিবুচন্দ্র দাস জানান, শুক্রবার সকালে চিকিৎসকেরা সিজ়ার করার কথা বলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সিজ়ার করার পরে ছ’ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে না রেখে দু’ঘণ্টা রাখা হয়েছিল। পরে রোগীর খিঁচুনি হলে চিকিৎসকেরা জানান আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে।’’
শিবুর ক্ষোভ, ‘‘দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচারে ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা যায়। চিকিৎসকের গাফিলতির জন্য স্ত্রীকে হারালাম। যারা এ জন্য দায়ী, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।’’
শুক্রবার রাতে লতার মৃত্যুর খবর পেতেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতাল চত্বরে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিজনেরা। কাকদ্বীপ ও হারউড পয়েন্ট উপকূল থানার দুই ওসির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মৃতের পরিজনেরা স্থানীয় থানা ও হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। লতার সদ্যোজাত পুত্রসন্তান সুস্থ রয়েছে।
রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ ওই হাসপাতালেই খিঁচুনি নিয়ে ভর্তি হন নামখানার মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দা, অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস পারভিন (২১)। সকাল ৮টা নাগাদ চিকিৎসারত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রসূতির গর্ভস্থ বত্রিশ সপ্তাহের সন্তানকেও বাঁচানো যায়নি।
নার্গিসকে অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে নামখানা দ্বারিকনগর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অবস্থার অবনতি হওয়া কাকদ্বীপ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কোথাও অভিযোগ করা হয়নি।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই হাসপাতালে দুই প্রসূতির মৃত্যুতে পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দুই প্রসূতির দেহের ময়না তদন্ত করে পরিবারের লোকজনের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়। সুপারের আশ্বাস, ‘‘কেউ দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা হবে।’’