হাতে চ্যানেল নিয়েই চা খেয়ে ফিরছেন রোগী। ডান দিকে, হাসপাতালে ঢুকছেন। নিজস্ব চিত্র
হাতে স্যালাইনের চ্যানেল করা। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলেন এক রোগী। হাসপাতালের গেটে দাঁড়ানো নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু কিছু বললেন না। রোগী পাশের এক চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেয়ে ফের হাসপাতালে ঢুকে গেলেন!
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ এমন দৃশ্য দেখা গেল অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। ওই রোগীকে প্রশ্ন করাতে তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ মিনিটের জন্য বেরিয়ে চা খেতে গিয়েছিলাম। কেউ বাধা দেননি। এমন তো এখানে অনেক রোগীই করেন।’’ মঙ্গলবার ওই রোগী ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পরও হুঁশ ফেরেনি অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এখনও চিকিৎসাধীন রোগীরা বিনা বাধায় ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে ফের তাঁরা ওয়ার্ডে ফিরে যাচ্ছেন। যদিও হাসপাতাল ভবনের গেটে নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছেন।
২২ জুলাই সকালে প্রকাশ্যে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন নিতাই মণ্ডল নামে চিকিৎসাধীন এক প্রৌঢ়। এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি। ওই ঘটনার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর আত্মীয় ও এলাকার মানুষ।
কিন্তু পরিস্থিতির যে বিন্দুমাত্র বদল হয়নি তা বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়েই দেখা গেল। ওয়ার্ডের গেটে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীকে এ বিষয়ে জানাতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, ‘‘রোগী বাইরে গিয়েছেন এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ ছবি আছে বলাতে ওই কর্মী চুপ হয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘এখান থেকে সরে যান, রোগীরা আসছেন।’’
রোগীর আত্মীয়েরা জানান, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাইরে ঘুরে আসার এমন ঘটনা এই হাসপাতালে প্রায়ই হয়। অনেকেই হাসপাতালের পিছন গেট থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরেও আসেন। হাসপাতালের অনেকেই এটা জানেন। কিন্তু কিছু বলেন না। নিরাপত্তা রক্ষীরাও বাধা দেন না বলে অভিযোগ। রোগীর আত্মীয়রা বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা চিন্তায় পড়ি। রোগী ভর্তি করার পরেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না। এর মধ্যে আবার রোগী নিখোঁজের ঘটনাও ঘটে গিয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, অনেক সময় রোগীর বাড়ির লোকজনও রোগীকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চান।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ভিজিটিং আওয়ারে এটা একটা সমস্যা। ওই সময় রোগীর বাড়ির লোকজন ওয়ার্ডে ঢোকেন। তখনই রোগীরা বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। রোগীদের ও বাড়ির লোকজনকে আলাদা করে শনাক্ত করার উপায় থাকে না।
হাসপাতাল সুপার সোমনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘রোগীর বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মানুষকেও ওই বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে।’’