দীর্ঘদিন ধরে ভোটের কাজে যেতে পারেন না। ভোটের দিন স্রেফ ছুটি ভোগ করতে করতে বিরক্ত তাঁরা। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এলাকার পুনর্বিন্যাস হয়। তারপর থেকেই ভোটের কাজ থেকে বঞ্চিত ক্যানিঙের ১২৪ জন স্কুল শিক্ষক।
কিন্তু কেন?
কারণটা অজানাই ওই শিক্ষকদের। কিন্তু এটা জানেন, ভোটের গুরুদায়িত্ব পেতে তাঁদের ভালই লাগে। দায়িত্বশীল নাগরিক বলে মনে হয় নিজেদের। কিন্তু সে সুযোগ আর মিছে কই!
অবশেষে এ বার বিধানসভা ভোটের কাজে তাঁদের সামিল করার আবেদন জানিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে ইতিমধ্যেই লিখিত আর্জি জানিয়েছেন ওই শিক্ষকেরা। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর না মেলায় হতাশ সকলে।
ভোটের কাজকে নেহাতই ‘দায়’ মনে করে যেখানে নিজেদের নাম কাটাতে ব্যস্ত বহু সরকারি কর্মী, সেখানে ভিন্ন মানসিকতা দেখিয়ে ব্যতিক্রমী এই শিক্ষকেরা। নদিয়া বা উত্তর ২৪ পরগনাতে তো প্রশাসনিক কর্তাদের ধরে, দফতরে দফতরে ধর্না দিয়ে নানা অজুহাতে নিজেদের নাম ভোটের ডিউটি থেকে বাদ দিতে মরিয়া অনেকে। সে জন্য প্রশাসনের কোপেও পড়েছেন অনেকে।
কিন্তু ক্যানিঙের এই শিক্ষকদের ভোটের কাজ করার জন্য আগ্রহ দেখে খুশি মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য। তাঁর কথায়, “ওই সব শিক্ষকেরা ভোটের কাজ করতে চান। ঘটনাটি জেলাশাসককে জানিয়েছি। দ্রুত ওই শিক্ষকদের ভোটের কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ক্যানিং ২ ব্লকের মধ্যে পড়ে আঠারোবাকি, মঠেরদিঘি ও কালীকাতলা গ্রাম পঞ্চায়েত। এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩৩টি স্কুল রয়েছে। এই প্রাথমিক স্কুলগুলির ১২৪ জন শিক্ষকই দীর্ঘদিন ধরে ভোটের কাজে যোগ দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। এলাকা পুনর্বিন্যাসের পরে এই জায়গাগুলি ক্যানিং ২ ব্লকের মধ্যে পড়ে ঠিকই। কিন্তু ওই সমস্ত স্কুলগুলি রয়ে গিয়েছে ক্যানিং ১ ব্লকের প্রাথমিক স্কুল সার্কেলের মধ্যে।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস পাঠক, শিশির সর্দার, দেবব্রত মণ্ডলরা বলেন, “আগে আমরা ভোটের কাজ করতে পারতাম। এখন আর তা পারি না। কিন্তু আমরা এই কাজে যোগ দিতে চাই।” শিক্ষকদের কারও কারও কথায়, ‘‘ভোটের ডিউটি করাটা সম্মানের বলেই মনে হয়। অনেক আত্মীয়-পরিজন ভোটের কাজে রাজ্যের নানা প্রান্তে যান। ফিরে এসে কত অভিজ্ঞতার কথা বলেন। অথচ, একই পেশায় থেকে আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’’
ভোটের কাজের জন্য ইতিমধ্যে অন্য স্কুল শিক্ষকদের কাছে সরকারি চিঠি এসে গিয়েছে। এরপরেও কী তাঁদের চিঠি আর আসবে? তারই অপেক্ষায় এখন ক্যানিঙের এই শিক্ষকেরা।