দুর্ঘটনা: হাবড়ায়। নিজস্ব চিত্র
কাঠের পাটাতনের উপর দুটি বেঞ্চ পাতা। চারদিক ঘেরা। উপরে ফাইবারের ছাউনি। ইঞ্জিনচালিত এই ভ্যানরিকশাই স্কুল থেকে বাচ্চাদের আনা-নেওয়া করার গাড়ি। এই ভ্যানো দিব্যি চলছে হাবড়া শহর জুড়ে। খুদে স্কুলপড়ুয়াদের ওই সব গাড়িতে করে বিপজ্জনক ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্কুলে। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
যেমনটা ঘটল বৃহস্পতিবার সকালে। একদল স্কুলপড়ুয়াকে নিয়ে ওই ধরনের একটি ইঞ্জিন ভ্যান এ দিন স্কুলে যাচ্ছিল। পথে চাকা ভেঙে গিয়ে ভ্যানটি সড়কের পাশে উল্টে পড়ে। জখম হয় প্রায় দশ জন খুদে পড়ুয়া। তারা সকলেই স্থানীয় হিজলপুকুর এলাকার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পড়ুয়া। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের উদ্ধার করে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তি করা হয় আটজনকে। কারও মাথা ফেটে গিয়েছে। কেউ-বা হাতে-পায়ে-বুকে চোট পেয়েছে। জখম পড়ুয়াদের বাড়ি স্থানীয় মহিষা মছলন্দপুর, আক্রামপুর বা কইপুকুর এলাকায়। জখম হয়েছেন ভ্যানচালকও।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া শহরের দক্ষিণ হাবড়া এলাকায়। দুর্ঘটনার পর এলাকার মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, কী ভাবে প্রকাশ্যে দিনের পর দিন পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করছে এই সব গাড়ি? বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশ ও প্রশাসনের উচিত, ওই ধরনের বেআইনি স্কুলগাড়ির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করা।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘ওই ধরনের ইঞ্জিনভ্যানে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। ওই সব ভ্যানের রেজিস্ট্রেশন আমরা দিই না।’’ শুধু ইঞ্জিনভ্যানে করে নয়, পায়ে টানা ভ্যানেও পড়ুয়া নিয়ে যাওয়া হয়। জখম পড়ুয়াদের একজন বলছিল, ‘‘আমি আর ইঞ্জিনভ্যানে চেপে স্কুলে যাব না।’’
পড়ুয়াদের এই কথা কি ঢুকছে অভিভাবকদের কানে?
এ প্রশ্ন উঠছে, কারণ, কেন তারা বেআইনি জেনেও ওই সব ইঞ্জিনভ্যানে করে ছেলেমেয়েদের এতদিন ধরে স্কুলে পাঠাচ্ছিলেন! কারণ জানতে চাওয়া হলে স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়েন অভিভাবকেরা। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘একসঙ্গে অনেকে ভ্যানে করে স্কুলে যায় বলে ভাড়া কম লাগে, সেই কারণে পাঠাই।’’
যে স্কুলের পড়ুয়ারা এ দিন জখম হয়েছে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৈত্রালী পাল বলেন, ‘‘গাড়িটা আমাদের স্কুলের নয়। ওটা প্রাইভেট গাড়ি। এ বিষয়ে তাই আমাদের কিছু বলার নেই।’’ বেআইনি জেনেও কেন তারা এত দিন ইঞ্জিন ভ্যানে পড়ুয়াদের আসতে দিয়েছেন— এই প্রশ্ন করা হলে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার ঘটেছে। এ বার বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই হবে।’’
পুলিশ কী বলছে? হাবড়া থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, হাবড়া এলাকার স্কুলপড়ুয়া নিয়ে চলা গাড়ির চালকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। তাঁদের বলে দেওয়া হয়, কী ভাবে গাড়ি চালাতে হবে। ভ্যান বা ইঞ্জিনভ্যানে ছাত্র তোলা যাবে না বলেও স্কুলগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরাও সচেতন নন। আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইঞ্জিন ভ্যানে ছাত্র তুললে এ বার থেকে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
ভ্যানচালকেরাই-বা কেন তাঁদের গাড়িতে একসঙ্গে এত পড়ুয়া তোলেন? এক চালক বললেন, ‘‘একসঙ্গে অনেক ছাত্রছাত্রী নিয়ে গেলে মোটা টাকা মেলে। তাই নিয়ে যাই। তবে নিরাপদেই নিয়ে যাওয়া হয়।’’