অবরোধ: গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করল বাসিন্দারা। জগদ্দলে। ছবি: মাসুম আখতার
ভোট যত এগিয়ে আসছে, জগদ্দল-ভাটপাড়ায় দুষ্কৃতী তাণ্ডব ততই বাড়ছে। রাত নামলেই বোমার শব্দে কেঁপে উঠছে এলাকা। সুনসান হয়ে পড়ছে রাস্তাঘাট। রবিবার রাতেও ফের ফের দুষ্কৃতী তাণ্ডবে গোলমাল বাধল জগদ্দলের স্থির পাড়ায়।
অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা এলাকার দুই যুবককে প্রথমে মারধর করে। পরে এলাকায় বোমাবাজি করে। এলাকার ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা সোমবার সকালে রাস্তা অবরোধ করেন। তাঁদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বন্ধ না হলে তাঁরা বড়সড় আন্দোলন শুরু করবেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এলাকায় নিয়মিত গোলমালে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
স্থিরপাড়ার বাসিন্দা রবিন দাস পেশায় গাড়ি চালক। তিনি বাইরে থাকেন। মাঝেমধ্যে এলাকায় ফেরেন। রবিবার রাতে ভাইকে নিয়ে তিনি বাইকে করে কালীপুজো দেখতে বের হয়েছিলেন। ফিরতে রাত হয়।
রবিন জানান, রাত ১১টা নাগাদ তাঁদের বাইক আটকায় জনা চারেক দুষ্কৃতী। তাদের মধ্যে দু’জনকে চিনতে পারেন রবিনরা। তারা এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
রবিন বলেন, ‘‘বাইক থেকে নামিয়ে ওরা আমাদের মারতে শুরু করে। কেন মারা হচ্ছে জানতে চাইলে ওরা ফোন করে পাড়ার এক জনকে ডাকতে বলে। আমি ডাকতে রাজি হইনি। বলি, আমি বাইরে থাকি সবাইকে চিনি না। তোদের দরকার তোরা ডাক। বলার সঙ্গে সঙ্গে রিভলভারের বাট, থান ইট দিয়ে আমাদের বেধড়ক মারা হয়। আমাদের বাইকটি ভেঙে ফেলে।’’
দুষ্কৃতীদের মারে মাথা ফাটে রবিনের। জখম হন তাঁর ভাইও। ওই অবস্থায় তারা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। সেখান থেকে যান থানায়। বাড়ি ফিরতে রাত দেড়টা বেজে যায়। রাত দুটো নাগাদ এলাকায় বোমাবাজি শুরু হয়। এলোপাথাড়ি বোমা পড়তে শুরু করে। এলাকারই বাসিন্দা দীপঙ্কর বিশ্বাসের বাড়িতে তিনটি বোমা পড়ে। তাতে তাঁর বাড়ির জানালার কাচ ভাঙে।
দীপঙ্কর বলেন, ‘‘রবিনদের গোলমালের ঘটনা শুনে বেশি রাতের দিকেই ঘুমোতে গিয়েছিলাম। রাত দু’টো নাগাদ বাড়ির লোকের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখি, বোমার ধোঁয়ায় সব অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরে বাইক নিয়ে দুষ্কৃতীদের পালাতে দেখি। যাওয়ার সময় ওরা গুলিও ছোড়ে।’’ সোমবার সকালে এলাকার বাসিন্দারা এক জোট হয়ে প্রতিবাদ শুরু করে। পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে গাছের গুঁড়ি ফেলে স্থানীয় রাস্তা অবরোধ করা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত নামলে আতঙ্ক বাড়ছে। বাসিন্দারা রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। এ রকম চলতে থাকলে পুরো এলাকা দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যাবে। তখন সাধারণ মানুষের বাস করাই দায় হয়ে দাঁড়াবে।
গত লোকসভা ভোটের পর থেকে ভাটপাড়া-জগদ্দল অশান্ত। বোমাবাজি-গুলি -সংঘর্ষ এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস দুয়েক আগে এক স্কুলছাত্রকে গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা। তখনও এলাকার বাসিন্দারা পথে নেমেছিলেন। পুলিশ আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু যে হয়নি রবিবারের রাতের ঘটনাই তার প্রমাণ। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে। এখন গোলমালও তেমন হচ্ছে না। রবিরার রাতের ঘটনাতেও দ্রুত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।