গঙ্গাসাগর। —ফাইল চিত্র।
সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা। পুণ্যার্থীর ঢল নামবে। মেলা ছাড়াও শীতকাল জুড়ে বহু মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে সাগরে। বকখালি পর্যটন কেন্দ্রেও সারা বছর আসেন পর্যটকেরা। শীতকালে বনভোজনে ভিড় বাড়ে বকখালিতে। অভিযোগ, পুণ্যার্থী-পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকলেও, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে দুই পর্যটন কেন্দ্রেই। সম্প্রতি গঙ্গাসাগরে অতিথিশালায় মহিলা পুণ্যার্থীর খুনের ঘটনায় সেই অভিযোগই নতুন করে সামনে আনছে।
গঙ্গাসাগর পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ও এলাকার লোকজন জানান, সমুদ্রতটে নির্জন এলাকায় পাহারার কোনও ব্যবস্থা নেই। নজরদারির অভাব আছে অন্যান্য এলাকায়ও। পুণ্যার্থীদের সুরক্ষার কথা ভেবে নিরাপত্তা আঁটোসাটো করার দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষ। তবে নিরাপত্তার নামে পুণ্যার্থীদের যাতে হেনস্থা হতে না হয়, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
এলাকার বাসিন্দা বিমল মণ্ডল বলেন, “এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো উচিত। অতিথিশালার ঘরগুলিতে তথ্য নিয়ে থাকতে দেওয়া উচিত।”
এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষিকা টুটুমণি গিরি বলেন, “সাগরে লোকে পুণ্যলাভের আশায় আসেন। কিছু অতিথিশালা আছে, যারা শুধু ব্যবসাটা বোঝে। অনেকেই নিয়ম মানেন না। বিষয়টি প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।”
সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাবিনা বিবি বলেন, “কপিলমুনি মন্দির চত্বর ও সমুদ্রতটে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই। প্রশাসন প্রয়োজন মনে করলে ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা হবে। তবে কপিলমুনি মন্দির এলাকা জুড়ে পুলিশের নজরদারি সব সময়ে থাকে।”
বকখালি পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলে দাবি এলাকার লোকজনের। অভিযোগ, দিনের বেলায় তা-ও দু’এক জন পুলিশের লোক চোখে পড়ে। রাতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সমুদ্রতট এলাকায় সিসি ক্যামেরা থাকলেও একাধিক ক্যামেরা ভাঙাচোরা। কাজ হয় না ঠিকঠাক। সমুদ্র সৈকতও বেহাল বলে অভিযোগ। চর পড়ে যাওয়ায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার হেঁটে সমুদ্রে পৌঁছতে হয়। তাতে বিপদ হয় অনেক সময়ে। স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় দাস বলেন, “নজরদারির অভাবে এলাকার কিছু যুবক ও কিছু পর্যটক মোটর বাইকে করে এসে এলাকার পরিবেশ কুলষিত করছে। বহু পর্যটক অস্বস্তি বোধ করেন।”
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিষেক দাস বলেন, “পর্যটন এলাকায় যদি সিসি ক্যামেরা ও আলোর সমস্যা থাকে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া, পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। দিনের বেলায় সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা সমুদ্রতট পাহারা দেন।” তিনি জানান,বকখালিতে পরিচয়পত্র ছাড়া ঘর ভাড়া দিলে গেস্টহাউসের লাইসেন্স বাতিল হবে।
গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক নীলাঞ্জন তরফদার বলেন, “গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হবে। বকখালিতেও কিছু সমস্যা আছে। তা আমরা তাড়াতাড়ি সমাধান করব।”
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট জানান, গঙ্গাসাগর ও বকখালি এলাকায় পুলিশ নজরদারি চালায়। পুলিশ মোতায়েনও থাকে দু’জায়গায়। বেসরকারি হোটেলগুলিতে প্রতি দিন কত জন থাকতে আসেন, সেই তথ্যও থানায় আসে।